দেশও ঘুরছেন, শিক্ষার্থীদেরও সচেতন করছেন ৪ ভ্রমণকন্যা
‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে স্কুটিতে করে দেশের ৬৪ জেলা ঘুরে শিক্ষার্থী ও অবহেলিত মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন চার ভ্রমণকন্যা। একই সঙ্গে ভ্রমণ ও জনসচেতনতামূলক এসব কাজ করাই এখন তাদের ব্রত।
চার সদস্যের দলটির নাম ‘ভ্রমণকন্যা’। চারজনের মধ্যে আছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিস চিকিৎসক ডা. মানসী সাহা, একই প্রতিষ্ঠানের অনারারি মেডিকেল অফিসার ডা. সাকিয়া হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলভী রহমান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনতাহা রুম্মান অর্থি।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে চার কন্যা দুটি স্কুটিতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন একের পর এক জেলা। বেশ কয়েকটি পর্বে দেশের ৬৪টি জেলার সবকটিতেই ভ্রমণ সম্পন্ন করবেন তাঁরা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি রশিদিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চার ভ্রমণকন্যা। ছবি : এনটিভি
এরই মধ্যে অষ্টম পর্বের মধ্য দিয়ে দলটি ৫৪ জেলায় ভ্রমণ সম্পন্ন করে। এ পর্বের শেষ জেলা ছিল হবিগঞ্জ।
গতকাল সোমবার হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করে ভ্রমণকন্যা টিম। পরে তারা নবীগঞ্জের আউশকান্দি র.প উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিংয়ে আত্মরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি এবং বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করেন।
একইদিন রাতে জেলা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয় দলটির পক্ষ থেকে। এ সময় তারা প্রেসক্লাবকে নিজেদের ভ্রমণের ওপর প্রকাশিত একটি স্যুভেনির উপহার দেন।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে ভ্রমণকন্যাদের মতবিনিময় সভা। ছবি : এনটিভি
মতবিনিময় সভায় ভ্রমণকন্যারা জানান, এ বছরেই দেশের বাকি জেলাগুলো ঘোরা সম্পন্ন করবেন তাঁরা। এ ভ্রমণে জেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুলে বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে তাঁরা সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বলে জানান। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক প্রথার কুফল, আত্মরক্ষার উপায়, মেধা বিকাশে করণীয় ইত্যাদি। প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে আত্মরক্ষা করতে হয় তা নারীদের হাতে কলমে শেখানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। সমাজে নারী যেন কারো অবহেলার পাত্র না হয়, তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, সে ব্যাপারে ভ্রমকন্যারা নারীদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন।
এ ছাড়া এসব ভ্রমণে নিজেদের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পর্যটন স্থানগুলোর ইতিহাস সম্পর্কে তাঁরা শিক্ষার্থীদের অবহিত করার চেষ্টা করেছেন বলে জানান। মানচিত্রের সাহায্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার অবহেলিত এলাকাগুলোতে তাঁরা যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মিশেছেন ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে। লিপিবদ্ধ করছেন তাঁদের অনেক সুখ-দুঃখের কথা। এ ছাড়া প্রত্যেক জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে সেগুলোর প্রাথমিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করছেন। ভ্রমণকে স্মরণীয় রাখতে করেছেন বিভিন্ন রকম ফটোসেশন। দেশব্যাপী এ যাত্রায় স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভ্রমণকন্যাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলেও জানান তাঁরা।
ভ্রমণকন্যারা তাঁদের ভ্রমণের ওপর প্রকাশিত স্যুভেনির তুলে দিচ্ছেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরীর হাতে। ছবি : এনটিভি
ভ্রমণকন্যারা বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি সুন্দর দেশ। এটি ঘুরে না দেখলে বোঝা যাবে না। তবে এ দেশের মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাঁরা মূলত মানুষকে সচেতন করে তুলতেই এ যাত্রা শুরু করেন। তাঁরা বোঝাতে চান, নারী চাইলে পুরুষের মতো সব কিছু করতে পারে।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও এনটিভি প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, একুশে টিভি ও যুগান্তর প্রতিনিধি সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন, প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইত্তেফাক প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক খোয়াই সম্পাদক শামীম আহছান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধি চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্য রিংকু, সময় টিভি ও মানবজমিন প্রতিনিধি রাশেদ আহমদ খান, আরটিভির প্রতিনিধি সায়েদুজ্জামান জাহির, দৈনিক করতোয়ার প্রতিনিধি টিপু চৌধুরী, একাত্তর টিভির প্রতিনিধি শাকিল চৌধুরী, নিউজ টুয়েন্টি ফোরের প্রতিনিধি শ্রীকান্ত গোপ, দৈনিক হবিগঞ্জের বাণীর সম্পাদক জিয়া উদ্দিন দুলাল, জিটিভির প্রতিনিধি মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি এস এম সুরুজ আলী, এসএ টিভির প্রতিনিধি আব্দুর রউফ সেলিম প্রমুখ।
আজ মঙ্গলবার চুনারুঘাটের বিভিন্ন চা বাগান পরিদর্শন করে মৌলভীবাজার জেলায় যান ভ্রমণকন্যারা।