অধ্যক্ষ সিরাজের অনেক খারাপ হিস্ট্রি আছে, গভর্নিং বডি জানত
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌন হয়রানির ঘটনার দিন স্থানীয় প্রশাসন, ম্যানেজিং কমিটি ব্যবস্থা নিলে তাঁর গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করেন এ-সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটির প্রধান।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. রুহুল আমীন গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এর আগে রুহুল আমীন দুদিন ধরে ঘটনাস্থল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা ও তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, ‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে অনেক খারাপ হিস্ট্রি রয়েছে, যা গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানত। যদি তাঁর ব্যাপারে আগে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।’
ডিআইজি আরো বলেন, ‘পিবিআই যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে গভর্নিং বডির সদস্যরা আছেন। যাদের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তিনি যেই হোক। এবং এটা অব্যাহত থাকবে নিশ্চিত বলতে পারি।’
রুহুল আমীন আরো বলেন, ‘সিরাজ উদ দৌলা যেহেতু এখানকার অধ্যক্ষ ছিলেন, তিনি যত খারাপ কাজই করুক, তার কিছু সমর্থক এখানে ছিল। যারা ছিল, তারাই এসব জিনিস অর্গানাইজ করেছে। এর পেছনে হয়তো আরো কিছু লোকের ইন্ধন ছিল।’
এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতির বিষয়ও জড়িত রয়েছে বলে জানান ডিআইজি রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘একই দলের দুজন কাউন্সিলর অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন করেছে। প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে।’
রুহুল আমীন জানান, সোনাগাজীর ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাফিলতির বিষয়ে তদন্ত চলছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তদন্ত কার্যক্রম শেষ হতে আরো তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে জানিয়ে ডিআইজি রুহুল আমীন বলেন, ‘নথিপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। সাধারণ একটি মামলা তদন্ত করতে এক মাস সময় লাগে। এটি একটি বড় ঘটনা, তাই কিছুটা সময় লাগবে।’
ডিআইজি আরো বলেন, ‘প্রতিবেদনে সোনাগাজীর ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান কমিটিও ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনসহ প্রশাসনের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখে।’ তদন্ত কমিটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডিআইজি রুহুল আমীনের নেতৃত্বে একজন পুলিশ সুপার, দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক এ তদন্ত কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য, রাফির পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও কর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করেন তাঁরা।