নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করলেন জোবায়ের
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন মামলার অন্যতম আসামি সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের।
১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রোববার সকালে জোবায়েরকে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয়।
জবানবন্দির পর সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফ করেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, জোবায়ের আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি ঘটনার দিন কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন এবং ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
জবানবন্দিতে জোবায়ের হত্যার সময় কার কী ভূমিকা ছিল আদালতে বিস্তারিত বর্ণনা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু মামলার তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করা যাচ্ছে না বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা।
এ ছাড়া রাঙামাটি থেকে আটক নুসরাত হত্যা মামলার সন্দেহভাজন ইফতেখার হোসেন রানা ও কুমিল্লা থেকে আটক ইমরান হোসেন মামুনকে বিকেলে পিবিআই একই আদালতে হাজির করে। আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন।
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ইফতেখার হোসেন রানা ও ইমরান হোসেন মামুন। ছবি : এনটিভি
এদিকে নুসরাত হত্যায় কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কি না তা তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের একটি টিম সোনাগাজীর বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শন করে সন্দেহভাজন হিসাবগুলো তদন্ত করছে বলে জানান পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১১ এপ্রিল একই আদালত তাঁকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেন। তিনি নুসরাতের সহপাঠী ছিলেন।
মামলার অন্যতম আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে জোবায়েরের কথা। শামীম বলেছেন, নুসরাতকে মেঝেতে শুইয়ে ফেলার পর জোবায়ের তার ওড়না দুই টুকরো করে হাত ও পা বেঁধে ফেলেন।
এদিকে শনিবার জোবায়েরকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পিবিআই এবং হত্যায় ব্যবহৃত বোরকা উদ্ধার করা হয় খাল থেকে। হত্যার সময় ওই বোরকা পরে ছিলেন জোবায়ের।
নুসরাত হত্যায় এখন পর্যন্ত আটজন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের হোসেন।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীন, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলমসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।