ভেঙে যাওয়া বিয়ে জোড়া লাগালেন এএসপি কামরান!
রোজা শুরুর আগের দিন অর্থাৎ ৬ মে দুপুরে বিয়ের ধুমধাম আয়োজন চলছে। রান্না-বান্না শেষ, আত্মীয় স্বজন এসে হাজির। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, বরপক্ষের খোঁজ নেই। চিন্তায় অস্থির কনের পরিবার।
বরপক্ষের সঙ্গে বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তারা কনেপক্ষকে জানিয়ে দেয়, ছেলের পক্ষে বিয়ে করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রান্না করা খাবার থাকে পড়ে, শুরু হয় কান্নাকাটি। এর ভেতরে মেয়ে কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন!
ঘটনাটি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের লাউফোড়া গ্রামের। বরপক্ষ না আসায় বিকেল থেকে অনবরত বরপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলে মেয়েপক্ষের লোকজন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, অবস্থানে অনড় থেকে আসেনি বরপক্ষ। কিন্তু কেন বরপক্ষ আসেনি সেই তথ্য রাত ১টার আগেও জানতো না কনেপক্ষ। কারণ, কী কারণে বর বিয়ে করবেন না তা বরপক্ষ কাউকেই জানাননি। চলতে থাকে মিটিং-সিটিং।
সেহরির রাত, ঠিক সাড়ে ১২টা। মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কামরান হোসেনের বাসভবনের সামনে জটলা, হট্টগোল আর কান্নাকাটির শব্দ। কোনো উপায় না পেয়ে কনেপক্ষের লোকজন এসেছেন বিচার চাইতে। তখন কামরান হোসেন তাঁর গানম্যানকে নিচে পাঠান পরিস্থিতি দেখে আসতে। ঘটনা শুনে গানম্যান কনেপক্ষের লোকজনকে বাসভবনে নিয়ে যান। তখন মেয়েপক্ষের লোকজন ঘটনা খুলে বলেন কামরান হোসেনকে।
ঘটনা শুনে কামরান হোসেন বরপক্ষকে ওই রাতেই ডেকে পাঠান। আসেন বরপক্ষের লোকজন। কিন্তু তখনও বিয়ের পক্ষে সম্মতি দেন না বর। অনেকভাবে কাউন্সিলিং করার পর বর পুলিশ কর্মকর্তা কামরান হোসেনকে বলেন, মধুপুর উপজেলার পচিশা নামক গ্রামের একটি ছেলে কনেকে পছন্দ করেন। বিয়ে করলে সেই ছেলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তাই আমি বিয়ে করতে যাইনি। কিন্তু এটা জানতাম, মেয়ে ওই ছেলেকে পছন্দ করে না।
দুইপক্ষের বরাত দিয়ে বুধবার রাতে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কামরান হোসেন এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানান।
কামরান হোসেন বলেন, কিছু বখাটের কথা বলার পর আমি তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলাম। আর এরপরও বিয়ে না করলে আইন অনুযায়ী বরকে শাস্তির আওতায় আনার কথা জানালাম। তখন ছেলেপক্ষ বিয়ে করতে রাজি হয়। শুরু হয় আবার আনন্দ উৎসব। বখাটের খোঁজে পুলিশ পাঠালাম। এর মধ্যে বখাটেরা এলাকা থেকে পালিয়েছেন।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে কনেপক্ষের লোকজন বরকে নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে যায়। পুনরায় শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। দুপুরে রান্না করা বিয়ের ভোজ রাতে খান সবাই। দিনে বিয়ে হলে যত লোকজন হতো তার চেয়ে বেশি লোক উপস্থিত হয়েছিল বিয়ে বাড়িতে। আমরা বিয়েতে সরাসরি ছিলাম না, তবে বিয়ে বাড়ির আশেপাশে ছিলাম। হঠাৎ যাতে কোনো সমস্যা না হয়। ভালোই লাগছে। না হলে মেয়েটার ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো।