পাকা ধানক্ষেতে আগুন দিলেন টাঙ্গাইলের আরেক কৃষক
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর পর এবার বাসাইল উপজেলায় নিজের পাকা ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন নজরুল ইসলাম খান নামের এক কৃষক। সোমবার বিকেলে তিনি নিজের ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেন।
নজরুল ইসলাম খান জানান, একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি অপরদিকে ধানে চিটা বের হচ্ছে। এসব কারণে ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিছি।
চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ধান ঘরে তোলার খরচও উঠছে না কৃষকের। এ অবস্থায় ক্ষোভে, দুঃখে অনেক কৃষক ধান ক্ষেতেই রেখে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গত রোববার টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে একই কারণে মালেক শিকদার নামের এক কৃষক ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
সোমবার বিকেলে বাসইল উপজেলার কাশিল বটতলা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম খান তাঁর পাকা ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিলে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, শ্রমিকের দাম বেশি, ধানের দাম কম। ধান ৫০০ টাকা মণ আর প্রতি কামলার প্রতিদিনের মজুরি ৯০০ টাকা। আবার ধানের ভেতরে চাল নেই। অর্থাৎ ধানে চিটা ধরেছে। আমরা কৃষি অফিসের লোকজনের কাছে পরামর্শ করে ওষুধ দিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ অবস্থায় এখন জমি বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেউ বলেও জানান কৃষক নজরুল ইসলাম।
এবার টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। স্থানীয় হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। একজন শ্রমিক দিনে দুই থেকে আড়াই মণ ধান কাটতে পারেন। শ্রমিকের মজুরি ও খাওয়া খরচের পর কৃষক লোকসানের মুখে পড়ছেন। এ অবস্থায় প্রতি বিঘা জমিতে ধান আবাদে কৃষকের লোকসান গুণতে হচ্ছে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। ক্ষেতে ধান পেকে পড়ে আছে। শ্রমিকের অভাবে কৃষক ধান কাটতে পারছে না। কেউ কেউ ক্ষোভে, দুঃখে ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আগামীতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে, বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার জানান, চলতি বোরো মৌসুমে টাঙ্গাইলে বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে একযোগে ধান কাটা ও বাজারে বিক্রি করার কারণে কৃষকরা ধানের বাজার মূল্য কিছুটা কম পাচ্ছে। আবার শ্রমিকের দামও বেশি। সেই কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষিতে ৫০ ভাগ ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষকদের আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ধান কর্তন করতে পারলে খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। আগামীতে যদি সার কীটনাশকসহ যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি বাড়ানো যায় তবে কৃষকরা লাভবান হবে।