মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলা নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসেনের আদালত ২১ আসামির উপস্থিতিতে মামলাটি স্থানান্তরের আদেশ দেন। ফলে মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণসহ অন্যান্য কাজ এখন থেকে ট্রাইব্যুনালেই চলবে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু আদেশ-পরবর্তী সময়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলাটি একজন নারীকে পুড়িয়ে হত্যার জন্য। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই যে অভিযোগপত্র দিয়েছে, সেই অভিযোগপত্র গ্রহণ বা শুনানির এখতিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম) কোর্টের নেই। ফলে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই অভিযোগ গ্রহণের ব্যাপারে শুনানি হবে।’
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘটনায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ সব আসামিকে আদালতে হাজির করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা তখন আদালতে হট্টগোল তৈরির চেষ্টা করেন।
আদালত চলাকালে আসামি মোকসুদ আলমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক জানিয়ে দেন, জামিন সংক্রান্ত বিষয়াদি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি হবে। সেখানে আবেদন করতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম এই অভিযোগপত্র জমা দেন। তিনি জানান, অভিযোগপত্রে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত অপর ১৪ আসামি হলেন নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল।
ঘটনার এক মাস ২১ দিনের মাথায় মামলাটির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ১৬ জনকে দায়ী করে ৭২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ না নিলেও হত্যার মূল দায় অধ্যক্ষ সিরাজের।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানী ধানমণ্ডিতে পিবিআইর সদর দপ্তরে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ১৬ জন জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। এদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানানো হবে।
ডিআইজি আরো বলেন, এ মামলায় ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সাতজন এরই মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মেয়েকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ আনেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার।
মামলাটি তুলে না নেওয়ায় গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে কৌশলে ডেকে পাশের ভবনের তিনতলার ছাদে নিয়ে সিরাজ উদ দৌলার সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।