স্বামীর খুনি নয়নের সঙ্গেও বিয়ে হয়েছিল মিন্নির!
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফের খুনি সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের সঙ্গে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়েছিল গত বছরের ১৫ অক্টোবর। ওই বিয়ের আট মাসের মাথায় গত মে মাসের শুরুতে নয়নের বন্ধু রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়। সেই বিয়ের দুই মাস না হতেই গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড, তার বন্ধু রিফাত ফরাজীসহ অন্য সহযোগীরা।
রিফাত শরীফের মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিফাত শরীফের অন্যতম প্রধান খুনি মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্ত নয়ন বন্ডের সঙ্গে ছিল মিন্নির প্রেমের সম্পর্ক। তাঁদের মধ্যে বিয়েও হয়েছিল। বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী অফিসে পাওয়া গেছে সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার কাবিননামাও। এ বিয়েতে রিফাত শরীফের হত্যাকারী রিফাত ফরাজী ছিল দুই নম্বর সাক্ষী।
সংশ্লিষ্ট কাজী মো. আনিচুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, গত বছরের ১৫ অক্টোবর আসরের নামাজের পর সাব্বির আহম্মেদ নয়নের সঙ্গে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি বিয়ে হয়। সেদিন তারা ১৫-২০ জন বিয়ে পড়াতে আসে। বয়স প্রমাণের জন্য তারা এসএসসি সার্টিফিকেটের কপি নিয়ে আসে। তারপর বললাম, মেয়ের বাবা কোথায়? তারপর বলল, মেয়ের বাবা তো আসবে না। আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। মেয়ের মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললাম। তিনি বললেন, মেয়ের বাবা তো এখন বিয়ে মানবে না। পরে মানবে। আপনি বিয়ে পড়াইয়া দেন। এরপর আমি বিয়ে পড়াইয়া দেই।
এদিকে মিন্নির সঙ্গে বিয়ের পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নয়ন। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে ঠাঁই হয় তার। তখন থেকে নয়নের বন্ধু রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রিফাত শরীফের মা-বাবা তাদের এ সম্পর্ক মেনে না নিলে মিন্নি তাঁদের বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ছয় লাখ টাকা কাবিনে গত মে মাসের শুরুতে মিন্নির সঙ্গে একমাত্র ছেলেকে বিয়ে দিতে বাধ্য হন বলে জানান রিফাতের বাবা দুলাল শরিফ।
এরপর একদিন নয়ন বন্ডের পাতানো ফাঁদে বেশ কয়েকটি ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় রিফাত শরীফ। রিফাত শরীফ জেলে থাকা অবস্থায় আবারও নয়নের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন মিন্নি। গড়ে ওঠে পুরোনো প্রেমের নতুন সম্পর্ক। এরপর রিফাত জেল থেকে বের হলে তাঁর সাথেই চলে মিন্নির সংসার।
যদিও নয়নের সঙ্গে বিয়ে এবং সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। তিনি বলেন, ‘নয়ন নামের ছেলে আমারে খুব ডিস্টার্ব করত, হুমকি-ধমকি দিত, অস্ত্র দেখাইত। আমার ভাইকে বলত, ওরে মাইরা ফালাইবে। আমার বোনরে বলত, মাইরা ফালাইবে। আমার আব্বুরে হুমকি-ধমকি দিত। একদিন আমারে ধইরা, অস্ত্র নিয়া, আমারে একটা বাসায় নিয়া একটা সাইন রাখছিল। এখন ওইটা দিয়া কিছু কি না আমি জানি না। তবে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এদিকে নয়নের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ককে সন্দেহ করে রিফাত সব সময় মিন্নিকে কলেজে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। পাহাড়া দিয়ে কলেজে আনা-নেওয়া পছন্দ করতেন না মিন্নি। হত্যার ঘটনার কয়েক দিন আগে থেকেই খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছিল রিফাতের সঙ্গে মিন্নির। এ খারাপ সম্পর্ক গড়ায় যায় রিফাতের মা-বাবার সঙ্গেও।
রিফাতের বাবা দুলাল শরিফ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার দিন গত বুধবার রিফাতের সঙ্গে একত্রে বরগুনা সরকারি কলেজে গেলেও তাঁদের মধ্যে খুব একটা কথা হয়নি। ঘটনার সময় রিফাতকে একের পর এক কুপিয়ে আহত করলেও মিন্নির গায়ে এতটুকু আচড় দেয়নি খুনিরা। ঘটনার পর অভিমানে ক্ষোভে মিন্নিকে রেখে একাই রিকশায় ওঠেন রক্তাক্ত রিফাত। বরগুনা সদর হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হওয়ার সময়ও মিন্নি সেখানে ছিলেন না। তা ছাড়া বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যখন রিফাতকে নেওয়া হয় তখনো মিন্নি ছিলেন চোখের আড়ালেই।
এসব নানা কারণে রিফাতের লাশ দাফন করার পরে রিফাতের বাড়ির এক শ্রেণির তরুণ ও কিশোরের তোপের মুখে পড়েন মিন্নি। পরে তাঁকে নিরাপদে সরিয়ে রাখেন রিফাতের মা-বাবা।
মিন্নির বাবার নাম মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। বরগুনা সরকারি কলেজের ডিগ্রির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বরগুনা সদর উপজেলার মাইঠা এলাকায় তাঁদের বাড়ি।