ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে যা হয়
মর্গ। নাম শুনলেই যেন গা ছমছম করে। সেখানে পা বাড়াতে চায় না কেউ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গের আজ পর্যন্ত কোনো সংস্কার হয়নি।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মর্গে আলো, পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে নামমাত্র। একমাত্র ডোম ২০ বছর ধরে কর্মরত থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়নি। আধুনিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাঁকে হাতুড়ি, বাটালি ও সার্জারি ব্লেড দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এমনই দুরবস্থা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে ফেনী সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু। এরপর ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলে এর নামকরণ হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালের এমন উন্নয়নের পরও মর্গের কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি।
আলো, পানি ও বিদ্যুৎ সব সুবিধাই এখানে অপ্রতুল। লিঙ্গভেদে ময়নাতদন্তের জন্য পুরুষ ও নারী ডোম রাখার নিয়ম থাকলেও এ মর্গে শুধু আবদুর রহিম বাদশা নামের একজন পুরুষ ডোমই কর্মরত। চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় ২০ বছর ধরে মাস্টার রোলেই কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে।
ডোম বাদশা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আধুনিক মর্গ স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিকায়ন না হওয়া পর্যন্ত মর্গে নিয়ম অনুযায়ী লাশ ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হবে না। এতে বিভিন্ন মামলার আলামত নষ্ট হয়।
তিনি জানান, শুরু থেকে মাস্টার রোলে চাকরি করে আসছেন। বহু চেষ্টা-তদবির করেও তাঁর চাকরি স্থায়ী করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অথবা প্রশিক্ষণ নেই। অন্য কেউ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছে না বিধায় তিনি এ পেশা ছাড়তেও পারছেন না। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় সাত হাজার লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে কোনো জেনারেটর নেই। হাসপাতালের মূল ভবন থেকে একটি তার টানিয়ে কোনোরকম বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে ময়নাতদন্তের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে ডোমের বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। এখন পর্যন্ত কোনো এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়নি। এতে গুলিবিদ্ধ লাশ ময়নাতদন্তের সময় গুলি চিহ্নিত করতে নানা স্থানে কাটাকাটি করতে হয়। এতে করে লাশের রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। মর্গে আলামত রক্ষাকারী বক্স না থাকায় তা যত্রতত্র রেখে সংরক্ষণ করেন ডোম ও সংশ্লিষ্টরা।
বৈদ্যুতিক করাতের ব্যবহার না করতে পারায় লাশ ব্যবচ্ছেদ করা হয় হাতুড়ি, বাটালি ও সার্জারি ব্লেড দিয়ে। উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় মেঝেতে রেখে লাশ ময়নাতদন্ত করতে হয়। ময়নাতদন্তের পর পর্যাপ্ত পানির অভাবে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আশপাশের লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ বিষয়ে ফেনীর সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, হাসপাতালে জনস্বার্থে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে। বর্তমানে হাসপাতালের ড্রেন ও ডাস্টবিন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর মর্গ আধুনিকায়ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।