বিয়ের ১১ দিনের মাথায় বউকে তালাক দিয়ে শাশুড়িকে বিয়ে
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় এক সালিশী বৈঠকে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে শাশুড়িকে বিয়ে করার ঘটনা ঘটেছে। দাম্পত্য কলহের জের ধরে বিয়ের মাত্র ১১ দিনের মাথায় উপজেলার কড়িয়াটা গ্রামে শনিবার এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের মোনছের আলী (৩২) গত ২ অক্টোবর গোপালপুর উপজেলার কড়িয়াটা গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে নূরুন্নাহার খাতুনকে (২১) বিয়ে করেন। বিয়ের পরের দিন শাশুড়ি মাজেদা বেগম (৪০) মেয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। মেয়ের সঙ্গে এক সপ্তাহ সেখানে অবস্থানের পর গত শুক্রবার বর কনেসহ নিজবাড়ি ফেরেন তারা।
শনিবার সকালে নূরুন্নাহার বরের সঙ্গে সংসার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে শুরু হয় পারিবারিক কলহ। শাশুড়ি মাজেদা বেগম তখন নূরুন্নাহার সংসার না করলে তিনি নিজেই নতুন জামাতার সংসার করবেন বলে জানান। এ অবস্থায় শ্বশুর নূর ইসলাম গ্রাম্য সালিশ ডাকেন। গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন সালিশ বৈঠকে বসেন।
বিচার চলাকালীন মাজেদা বেগম ও মোনছের আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে মারধরও করা হয়। একপর্যায়ে পুরো পরিবারের সম্মতিতে নূর ইসলাম প্রথমে স্ত্রী মাজেদা বেগমকে তালাক দেন। এরপর বর মোনছের আলী নববধূ নূরুন্নাহারকে তালাক দেন। তারপর সবার উপস্থিতিতে মোনছের আলীর সঙ্গে মাজেদা বেগমের এক লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়। হাদিরা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী জিনাত বিয়ে সম্পন্ন করেন।
কাজী জিনাত জানান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম্য মাতব্বর ও ওই পরিবারের সব সদস্যের সম্মতিতে দুটি তালাক এবং একটি বিবাহের কাজ একই অনুষ্ঠানে সম্পাদন করা হয়।
নূরুন্নাহার খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বিয়ের সময় টাকা ও যেসব স্বর্ণালঙ্কার দেওয়া হয়েছিল সেগুলো তিনি ফেরত চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর মা যে মেয়ের জামাইকে বিয়ে করবেন এটা তিনি ধারণাও করতে পারেননি।
বিয়ে করতে না করতে স্বামীর সংসার না করার কারণ জানতে চাইলে নূরুন্নাহার কিছু বলেননি।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, পুরো কাজটি হয়েছে ওই পরিবারের সম্মতিতে। তবে শাশুড়ি বিয়ে করার ঘটনায় আপত্তি থাকায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে মোনছের ও মাজেদাকে শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার জানান, শাশুড়ির বিয়ের খবরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বাড়ি ঘেরাও করে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। পরিবারের সবার সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তিনি বিয়ের সম্মতি দেন।
এদিকে জামাই-শাশুড়ির বিয়ের খবরে ওই গ্রামে ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
তবে জামাই মোনছের আলী বিয়ের পর থেকেই লাপাত্তা বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
এ ব্যাপারে গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি আজ আমি শুনেছি। উভয়পক্ষের সম্মতিতেই নাকি এ ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোনো অভিযোগে করতে আসেনি। কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।