শাশুড়ির সঙ্গে জামাতার বিয়ে : চেয়ারম্যান-মেম্বার-কাজির বিরুদ্ধে মামলা
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে শাশুড়ির বিয়ে দেওয়া এবং তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে।
গতকাল রোববার গোপালপুর আমলি আদালতে দায়ের করা মামলায় সালিশকারী হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, সদস্য নজরুল ইসলাম, হাদিরা ইউপির নিকাহ রেজিস্ট্রার গোলাম মওলা জিন্নাহসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আইনজীবী হাবিবুর রহমান পরে গণমাধ্যমকে বলেন, ভুক্তভোগী মাজেদা বেগম বাদী হয়ে এই মামলাটি করেছেন। আদালতের বিচারক শামছুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন, শারীরিক নির্যাতন, ধর্মীয় অবমাননা ও মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, মামলার আসামিরা বিভিন্নভাবে বাদীপক্ষের লোকজনকে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। তাঁরা তাদের জীবনের নিরাপত্তাও চেয়েছেন আদালতের কাছে। তিনি আরো বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মামলার সপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষী-প্রমাণ রয়েছে। জড়িতরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী পূর্বপাড়ার মোনছের আলী (৩২) গত ৯ আগস্ট গোপালপুর উপজেলার কড়িয়াটা গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে নূরুন্নাহার খাতুনকে (২১) বিয়ে করেন। এক লাখ টাকা দেনমোহরে এই বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না।
এই অবস্থায় অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে মাজেদা বেগম (৪০) মেয়ে নূরুন্নাহারের বাড়ি বেড়াতে যান। সেখানে তিনি এক সপ্তাহ অবস্থান করেন। পরে ৮ অক্টোবর সকালে মোনছের আলী স্ত্রী ও শাশুড়িকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কড়িয়াটাতে বেড়াতে আসেন। পরের দিন ৯ অক্টোবর নূরুন্নাহার তাঁর অভিভাবকদের জানান, তিনি আর মোনছেরের সঙ্গে সংসার করবেন না। এ নিয়ে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে নূরুন্নাহার আবার সংসার না করার কথা জানান সালিশকারীদের। তখন সেখানে থাকা শাশুড়ি মাজেদা বেগম রাগে ও ক্ষোভে মেয়েকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুই সংসার না করলে আমি করব।’
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, এই কথার জের ধরে জামাতা মোনছেরের সঙ্গে শাশুড়ি মাজেদা বেগমের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আনেন সালিশকারীরা এবং বৈঠকেই তাদের দুজনকে বেদম মারপিট করা হয়। পরে একপর্যায়ে সেখানে কাজি ডেকে আনা হয়।
তারপর নূর ইসলাম প্রথমে স্ত্রী মাজেদা বেগমকে তালাক দেন। এরপর বর মোনছের আলী নববধূ নূরুন্নাহারকে তালাক দেন। তারপর সবার উপস্থিতিতে মোনছের আলীর সঙ্গে মাজেদা বেগমের বিয়ে সম্পন্ন করেন কাজি গোলাম মওলা জিন্নাহ। এতেও এক লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়।
এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বিষয়টি জানার জন্য কড়িয়াটা গ্রামে ভিড় করে। এদিকে বিয়ের ঘটনার পর থেকেই মোনছের লাপাত্তা রয়েছেন।
গোপালপুর থানাও বিষয়টি জানত। কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ না করায় তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
তবে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে পেরে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। বিয়ের চারদিন পর গত ১৩ অক্টোবর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘শাশুড়ির বিয়ের খবরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বাড়ি ঘেরাও করে মারপিট শুরু করে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পরিবারের সবার সম্মতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমি বিয়ের সম্মতি দেই।’
ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পুরো কাজটি হয়েছে ওই পরিবারের সম্মতিতে। তবে শাশুড়ি বিয়ে করার ঘটনায় আপত্তি থাকায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে মোনছের ও মাজেদাকে শারীরিক শাস্তি দেওয়া হয়।’