খাগড়াছড়ির বিহারে হয়ে গেল কঠিন চীবর দান
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর আনন্দমুখর পরিবেশে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে মাসব্যাপী আয়োজিত কঠিন চীবর দান উৎসব শেষ হয়েছে। আলুটিলা ধাতুচৈত্য বৌদ্ধবিহারে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার সর্বশেষ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়।
কঠিন চীবর দান বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধভিক্ষুদের আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে প্রবারণা পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ধ্যান-সাধনার পর উপাসকরা বৌদ্ধভিক্ষুদের এ কঠিন চীবর দান করেন। কঠিন চীবর হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে কাপড় বানিয়ে তা সেলাই করে বৌদ্ধভিক্ষুদের পরিধানের উপযুক্ত করে দান করা। ভগবান গৌতম বুদ্ধের সময় উপাসিকা বিশাখা প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এভাবে তৈরি কাপড় দান করেন। সেই থেকে উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত কঠিন চীবর দান করে আসছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। এর ধারাবাহিকতায় গত এক মাসে প্রতিদিন খাগড়াছড়ির কোনো না কোনো বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়।
এ উপলক্ষে বিহারে বিহারে ধর্মদেশনার (হিতোপদেশ) আয়োজন করা হয়। সারিবদ্ধভাবে বৌদ্ধভিক্ষুরা যখন অনুষ্ঠানস্থলে আসেন, রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বৌদ্ধ নারী-পুরুষ ‘সাধু সাধু’ বলে তাঁদের বরণ করে নেন। পুণ্যলাভের আশায় অনেকে মাথায় করে চীবর, কল্পতরু নিয়ে শোভাযাত্রাসহকারে ধর্মের জয়, বুদ্ধের জয় নানা স্লোগানে উৎসবে যোগ দেন।
ভান্তেদের দেওয়া হয় বিশেষ ধরনের খাবার। বিহার প্রাঙ্গণে বুদ্ধপূজা, প্রদীপ পূজা, সংঘদানসহ ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
এসব উৎসবে বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা সমবেত দায়ক-দায়িকাদের উদ্দেশে ধর্মীয় দেশনা দেন। ধর্মীয় অগ্রজরা কঠিন চীবরের নেপথ্য তুলে ধরেন। পার্বত্য বৌদ্ধ মিশনের অধ্যক্ষ সুমনালংকার মহাথের ও দীঘিনালা বন বিহারের অধ্যক্ষ নন্দপাল মহাথের বলেছেন, কঠিন চীবর দান উৎসবের প্রভাবে সবখানে শান্তির উদয় হয়ে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করবে।