হবিগঞ্জের সাত মেয়র পদপ্রার্থীর কার সম্পদ কত
হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা প্রতিদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার লিফলেটে নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরার পাশাপাশি আধুনিক পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু তাতে নেই তাঁদের সম্পদের বিবরণ কিংবা মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। তবে প্রত্যেক প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাঁদের যাবতীয় সম্পদের পরিমাণ ও বার্ষিক আয়ের বিবরণ দিয়েছেন।
নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত হলফনামার পরিপ্রেক্ষিতে হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাত মেয়র পদপ্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ ও বার্ষিক আয়ের বিবরণ তুলে ধরা হলো।
জি কে গউছ : হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) জি কে গউছ বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। বর্তমানে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেটের কারাগারে বন্দি। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার রমনা থানার একটি মামলায় জামিনে এবং হাইকোর্টের আদেশ বলে স্থগিত রয়েছে। হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের দায়েরকৃত মামলায় তিনি জামিনে এবং মামলাটি বিচারাধীন।
হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আমলি আদালত ১-এ তদন্তাধীন একটি বিস্ফোরক মামলায় তিনি কারান্তরীণ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আমলি আদালত ১-এ আরেকটি মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনে ছয়টি মামলা ছিল। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তিনটি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তাঁর মালিকাধীন হবিগঞ্জ শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকায় মেসার্স এম এম ফার্মেসি, মেসার্স এম এম প্রিটিং প্রেস, দৈনিক আজকের হবিগঞ্জ পত্রিকা, শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় মেসার্স এম এ কনস্ট্রাকশন, মেসার্স প্রীতম কনস্ট্রাকশন ও পুলক কনস্ট্রাকশন রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত বার্ষিক আয় ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তাঁর মাসিক আয় এক লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। তাঁর পরিবারের বার্ষিক আয় চার লাখ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তাঁর পরিবারের মাসিক আয় ৩৫ হাজার টাকা। আয়ের মধ্যে কৃষি খাত থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ছয় লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তাঁর ব্যাংকে নিজ নামে ২৩ লাখ ৮১ হাজার ৮৮৮ টাকা, স্ত্রীর নামে রয়েছে ৮৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৫ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ছয় লাখ ১৯ হাজার ৬৬ টাকা।
জি কে গউসের একটি প্রাইভেটকার, একটি মোটর সাইকেল, নিজের ১০ তোলা ও স্ত্রীর ১৫ তোলা স্বর্ণালংকার রয়েছে। এ ছাড়া হলফনামায় বর্ণিত কৃষি জমির পরিমাণ ১৬.৩৬৫০ একর, .০৬ শতক পুকুর, অকৃষি জমি ঢাকার বাড্ডা মৌজায় ১০.৭৭ শতক, পূর্বাঞ্চলে প্লট ১০ কাঠা, বসুন্ধরায় .৬৫৩ কাঠা, মাধবপুর বাজারে একটি টিনশেড ঘরসহ স-মিল রয়েছে।
এ ছাড়া এ প্রার্থীর স্ত্রীর নামে হবিগঞ্জ শহরের পৌর এলাকায় ০.২৫০ শতক অকৃষি জমি, ঢাকার গুলশানে ৩১৫০ বর্গফুট বিশিষ্ট ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০১০ সালের ১১ মে বাবার মৃত্যুর কারণে তাঁর যৌথ মালিকানাধীন অকৃষি জমি চিহ্নিত করা হয়নি।
জি কে গউছ হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকার মরহুম গোলাম মর্তুজা ও মরহুম মঞ্জিলা বেগমের ছেলে।
আতাউর রহমান সেলিম : আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম হবিগঞ্জ শহরের কালীগাছতলার নোয়াহাটি এলাকার বাসিন্দা মুক্তার হোসেন ও মোছা. মানিক বাহারের ছেলে। স্বশিক্ষিত আতাউর রহমান সেলিম পেশায় একজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা থাকলেও মামলাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশমূলে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আতাউর রহমান সেলিমের ব্যবসা থেকে বছরে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে এক লাখ ৭৩ হাজার টাকা আয় হয়। অর্থাৎ তাঁর মোট বার্ষিক আয় তিন লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এ হিসাবে তাঁর মাসিক আয় ৩২ হাজার ৭৫০ টাকা। তার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ দুই লাখ, স্ত্রীর কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে সঞ্চয় ১০ হাজার টাকা, এক হাজার শেয়ার এয়ারলিঙ্ক লি., স্বর্ণালংকার নিজের ২৫ ভরি, স্ত্রীর ১০ ভরি, কৃষি জমি ২০ শতক, অকৃষি জমি ২.২৪৮৯ শতক, তাঁর স্ত্রীর নামে ০.২৪৮৯ অযুতাংশ বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রীর সাথে যৌথ নামে তাঁর ২৩২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে।
মিজানুর রহমান মিজান : হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর মধ্যহাটি এলাকার মর্তুজ আলী ও তৈমুন নেছার ছেলে মিজানুর রহমান মিজান। পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
মিজান হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন এসএসসি। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে কোনো মামলা নেই, অতীতেও ছিল না। ব্যবসায় তাঁর বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তাঁর মাসিক আয় ২১ হাজার ৬০০ টাকা। তার টাকার পরিমাণ ৫০ হাজার, স্ত্রীর কাছে রয়েছে ৫০ হাজার, ব্যাংকে সঞ্চিত এক লাখ ৮৮ হাজার টাকা, তাঁর কোনো স্বর্ণ নেই, তাঁর স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। তাঁর নিজ নামে কোনো কৃষি জমি নেই। যৌথ মালিকানায় রয়েছে ১৬০ কেদার, যার তিন ভাগের এক ভাগের অংশীদার তিনি, অকৃষি জমি তার নিজ নামে ১৫ শতক, যৌথ মালিকানা ৭.৫০ শতক, এতেও তিনি এক ভাগের অংশীদার, দালান আবাসিক ও বাণিজ্যিক ২.৬৪ একর, বাড়ি ও ফ্ল্যাট ৭.৫০ শতক তিন ভাগের এক ভাগের অংশীদার, তাঁর হবিগঞ্জ কৃষি ব্যাংকে ছয় কোটি, পূবালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় এক কোটি টাকা ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার সিসি লোন রয়েছে।
আমিনুর রশীর এমরান : হবিগঞ্জ পৌর বিএনপি সভাপতি আমিনুর রশীদ এমরান মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাক ও মৃত খাতিবুন্নাহার চৌধুরীর ছেলে। তিনি ১৯৭০ সালের ৩১ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিএ, এলএলবি উত্তীর্ণ।
আমিনুর রশিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত-১, হবিগঞ্জে একটি মামলা রয়েছে; যা বিচারাধীন। আয়ের মধ্যে কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় হয় ৪০ হাজার টাকা এবং ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে বছরে আয় হয় ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ তাঁর বার্ষিক মোট আয় ৪৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তাঁর মাসিক আয় তিন লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া তাঁর কাছে নগদ পাঁচ লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছে দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে তার নামে দুই লাখ ৫০ হাজার, ব্যাংকে স্থায়ী আমানত স্ত্রীর কাছে তিন লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার পাঁচ ভরি, তাঁর স্ত্রীর ১০ ভরি, বাসায় এসি, ল্যাপটপ ইত্যাদি বিভিন্ন আসবাবপত্রের কথাও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আমিনুর রশিদের জমির পরিমাণ কৃষি ৮.৮৬ একর, অকৃষি ১৪.৮৪ ও ৭.০০ শতক। উত্তরা ব্যাংক মিরপুর শাখায় তাঁর দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইসলাম তরফদার তনু : হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক দল সভাপতি এম ইসলাম তরফদার তনু মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। হবিগঞ্জ শহরের মাস্টার কোয়ার্টার এলাকার মরহুম ইসহাক তরফদার ও সৈয়দা সালেমা খাতুনের ছেলে ইসলাম তরফদার তনুর জন্ম ১৯৬৮ সালের ২ আগস্ট। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন বিএ পাস। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে, মামলাগুলো বিচারাধীন। অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে তিনটি মামলা হলেও তা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। শহরের রাজনগর এলাকায় মেসার্স তরফদার এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাপলা ফার্নিচার নামে তাঁর দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাঁর ব্যবসায় বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তাঁর মাসিক আয় ২২ হাজার ৫০০ টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে এক লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ১০ হাজার, কোনো স্বর্ণ নেই, স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।
তনু তাঁর হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তাঁর কোনো কৃষি জমি নেই, অকৃষি জমির পরিমাণ ০.১০ ও ০.০৯ একর। তাঁর স্ত্রীর ০.০৫২৫ একর, আবাসিক জমি ০.১৯৫ একর, পূবালী ব্যাংক বার লাইব্রেরি শাখা হতে এসএমই লোন রয়েছে দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৪৮ টাকা।
মোল্লা আবু নঈম মো. শিবলী খায়ের : জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিবলী খায়ের শহরের দক্ষিণ কোর্ট স্টেশন এলাকার মরহুম অ্যাডভোকেট মো. আবুল খায়ের মোল্লা ও মোছা. আমিনা খায়েরের ছেলে। তিনি পেশায় আইনজীবী। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই, অতীতেও ছিল না। তাঁর বার্ষিক আয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তাঁর মাসিক আয় ১৮ হাজার ৩৩৩ টাকা। নিজ পেশা থেকে আয় হয় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য ব্যবসা থেকে ৭০ হাজার টাকা। তাঁর নগদ টাকা এক লাখ, ব্যাংকে ১০ হাজার, বিবাহ সূত্রে তাঁর স্ত্রীর স্বর্ণ ১০ ভরি। তাঁর নিজ নামে কৃষি ও অকৃষি কোনো জমি নেই। যৌথ মালিকানাধীন ১৪ শতক বসতবাড়ি রয়েছে যার ১১ ভাগের দুই ভাগের অংশীদার তিনি। কোনো ব্যাংক ঋণ নেই।
আব্দুল কাইয়ুম : ইসলামী আন্দোলন মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আব্দুল কাইয়ুম শহরের রাজনগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি মরহুম আহাম্মদ হোসেন ও আমিনা খাতুনের ছেলে। হলফনামায় তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন এইচএসসি পাস। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তাঁর বার্ষিক আয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। মাসিক আয় ১৮ হাজার টাকা। তাঁর কাছে নগদ আছে ১০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৪০ হাজার, স্বর্ণালংকার বিবাহ সূত্রে ১০ ভরি, কৃষি ও অকৃষি কোনো জমি নেই, যৌথ মালিকানাধীন ৮ শতক জায়গা যার দুই শতকের অংশীদার তিনি। বাসায় বিভিন্ন আসবাবপত্র ফটোস্ট্যাট মেশিন ইত্যাদির বিবরণ দেওয়া হয়েছে।