প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলির হুমকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার!
নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্লাব নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৩৩ জন। এর মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও শ্রমিক লীগের ১৩ বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
প্রত্যাহারকারী ব্যক্তিদের অভিযোগ, শ্রমিক লীগ-সমর্থিত ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের সিবিএর নেতারা তাঁদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি করার হুমকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়েছেন।
এদিকে ১৩ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্লাবের ১১টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সিবিএ-সমর্থিত শ্রমিক লীগের নেতারা। বাকি চারটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টি ও শ্রমিক লীগের নয়জন বিদ্রোহী প্রার্থী।
ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্লাবের ২০১৬-১৭ বর্ষের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ক্লাবের এক হাজার ১১৪ জন ভোটার গোপন ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত সদস্যদের হাতে ক্লাব পরিচালনার দায়িত্ব দেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হিসেবে ক্লাবটিতে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হয়ে আসছে। এতে কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৭টি পদের মধ্যে সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষের পদ দুটি কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী নির্ধারণ করেন। সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংস্থাপন), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (কার্যক্রম), দপ্তর সম্পাদক, আন্তক্রীড়া সম্পাদক, বহিক্রীড়া সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও সদস্যসহ ১৫টি পদ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকে। এসব পদে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রার্থী হতে পারেন।
গত ১৩ জানুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করলে ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩৩ জন শ্রমিক-কর্মকর্তা তাদের প্রার্থিতা জমা দেন। এর মধ্যে ঘোড়াশাল সিবিএর সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার চাণ্ডাল ও নেতা ফরিদ হোসেনের সমর্থকরা ১৫টি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পাশাপাশি বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টি-সমর্থিত ১৮ জন শ্রমিক-কর্মকর্তা ১৫টি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলির হুমকি দেওয়ায় ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্লাবের সহসভাপতি পদে সিবিএ মনোনীত মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে ভোটে লড়াই করবেন জাতীয় পার্টি সমর্থিত সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পদে শ্যামল চন্দ্র দাসের সঙ্গে শ্রমিক লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন ও ইস্কান্দার মির্জা, যুগ্ম সম্পাদক (সংস্থাপন) পদে আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে শ্রমিক লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হক এবং সাহিত্য সম্পাদক পদে জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে শ্রমিক লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর হোসেনের লড়াই হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী কয়েকজন প্রার্থী জানান, চন্দন ও ফরিদ তাঁদের পছন্দের ১৫ প্রার্থীকে বিনা ভোটে নির্বাচিত করতে বাকি প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলি করার হুমকি দেন। ফলে বদলির ভয়ে ১৩ জন তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
সমাজকল্যাণ পদে মনোনয়ন প্রত্যাহারকারী শ্রমিক লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সিবিএ নেতারা গোপনে তাঁদের পছন্দের একক প্রার্থী নির্ধারণ করে মনোনয়ন জমা দেন। নির্বাচনে আমি প্রার্থী হলে আমাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কথা বলেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে আমাকে বদলি করার কথা বলে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। যার ফলে আমাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হয়।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংস্থাপন) পদে আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগেই আমাকে বদলি করার কথা বলে একাধিকবার সিবিএর পক্ষ থেকে হুমকি আসে। কিন্তু বদলি ভয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিনি।’
মোজাম্মেল জানান, ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে গেলে বেশির ভাগ ভোটার জানান সিবিএর পক্ষ থেকে নাকি বলা হচ্ছে ভোট তাঁদের সামনে দিতে হবে। যাতে তাঁরা বাকি চার পদে জয়ী হন। এতে নির্বাচনের দিন ভোটারের উপস্থিতি কম থাকার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সাখাওয়াত বলেন, ‘প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য সিবিএর পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু আমি আমার প্রার্থিতা বহাল রেখেছি।’
এসব বিষয়ে তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্লাব নির্বাচনের কমিশনার আক্তার হোসেন বলেন, ‘বদলির হুমকি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো। যে চারটি পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা আমাদের পক্ষ থেকে শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ থাকবে।’
ঘোড়াশাল তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র সিবিএর সভাপতি মানিক হোসেন জানান, বেশির ভাগ প্রার্থী নতুন চাকরিজীবী। তাঁরা প্রথমে মনোনয়ন কিনলেও পরে ভোটারদের কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সিবিএর পক্ষ থেকে বদলির হুমকি দিয়ে যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হতো তাহলে চারটি পদেও প্রার্থী থাকত না। এটি শুধু সিবিএ নেতাদের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সিবিএর সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক লীগ নেতা চন্দন কুমার চাণ্ডাল বদলি করানো ও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকির অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে বিভক্তি রেখে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে বিএনপি সুযোগ নিত। বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতারা ঐকবদ্ধ হয়ে প্রার্থী নির্বাচিত করায় ১১টি পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। অন্য চারটি পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই বিজয়ী হবে।