তথ্যদাতাকে লাখ টাকা পুরস্কার দেবে পুলিশ
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় চার শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারলে তথ্যদাতাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।
আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের নিখোঁজ হওয়া চার শিশুর লাশ পাঁচদিন পর বাড়ির অদূরে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এরা হলো বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার দুই চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে একই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার ছেলে একই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আবদুল কাদিরের ছেলে সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাঈল হোসেন (১০)।
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ ধারণা করছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
বিকেলে পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান (পিপিএম) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, ‘যদি কেউ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেন, তাহলে তাঁকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।’
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, নিখোঁজ শিশুরা শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ির পাশের মাঠে খেলাধুলা করতে গিয়েছিল। সন্ধ্যার পরও তারা বাড়িতে ফিরে না যাওয়ায় অভিভাবকরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। কোথাও তাদের সন্ধান না পেয়ে শুক্রবার রাতেই মাইকযোগে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়।
আজ বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন লোক মাটি কাটতে গিয়ে বাতাসে দুর্গন্ধ পান। এরপর তাঁরা নিখোঁজ শিশুদের বাড়ির অদূরে মাটিতে পুতে রাখা অবস্থায় একটি শিশুর হাত ও আরেক শিশুর পা দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
এ খবর দ্রুত মুখে মুখে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শত শত উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর লাশ উদ্ধারকাজ শুরু করে পুলিশ। বেলা দেড়টার দিকে উদ্ধারের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশগুলো হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র এ সময় মন্তব্য করেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। স্থানীয়দের মধ্যেই কেউ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। বাইরে থেকে কেউ এসে এমন ঘটনা ঘটাবে এটা বিশ্বাস করা যায় না।’
নিহতদের স্বজনরা দাবি করেন, আবদুল আলিম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। নিখোঁজ শিশুদের পরিবারগুলোতে এখন চলছে কান্নার রোল।
বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এই চার শিশুকে এলাকারই কেউ হত্যা করেছে। আমরা ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতকদের থানা-হাজতে দেখতে চাই। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
জেলা পরিষদের প্রশাসক ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী বলেন, এমন হৃদয়বিদারক নির্মম ঘটনা হবিগঞ্জে এই প্রথম। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অচিরেই ঘাতকদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।