‘রুবেল বখাটে, উত্ত্যক্ত করত মেয়েদের’
‘রুবেল আমাদের স্কুলেই পড়ত। আমাদের খুব জ্বালাতন করত।’ এভাবেই বলছিল, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। অন্য এক ছাত্রী বলে, ‘সে আমাদেরই স্কুলের ছাত্র। অথচ প্রতিদিন সে আমাদের ডিস্টার্ব করত।’
বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চার শিশু হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া রুবেলের কথাই বলছিল তার স্কুলের অন্য ছাত্রীরা। একাধিক ছাত্রী জানিয়েছে, রুবেল ছিল একজন বখাটে ছেলে। সে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করত মেয়েদের।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-১ কৌশিক আহম্মেদ খোন্দকারের আদালতে ১৬৪ ধারায় চার শিশু খুনের বিবরণ দেয় রুবেল। সে এবার ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
কেবল ছাত্রীরা না, স্থানীয় বাসিন্দা এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও রুবেলের বেশ সমালোচনা করেন।
এ ব্যাপারে ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসিত কুমার দেব বলেন, ‘রুবেল অনেক উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত। তাকে অনেক বুঝিয়েছি। তার বাবা আবদুল আলীকেও অনেকবার স্কুলে এনে তার অপরাধগুলো জানিয়েছি। সে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করত।’
প্রসিত কুমার আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি আবদুল আলীকে কয়েকবার ডেকে বলেছি, ছেলেটার দিকে একটু খেয়াল রাখেন। এমনকি আমি পর্যন্ত রুবেলকে সরাসরি পড়িয়েছি, বুঝিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ রুবেলকে এ পর্যায়ে যেতে হয়েছে।’
দাবি একটাই, যথাযথ শাস্তি
ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক ও জবানবন্দির কথা শোনার পর এবার বিচারের দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম। নিহত শিশুদের বাবা ও মায়েরা কেবল একটাই দাবি করছেন-দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসি চান তাঁরা।
নিহত শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া বলেন, ‘গতকালই আমরা শুনেছি, পাঁচ-ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে, এরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসি চাই আমরা।’
একই দাবি করেছেন শুভর মা। আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক তা তিনি চান না। নিহত তাজেলের বাবা আবদুল আজিজ বলেন, ‘অবিলম্বে ফাঁসি চাই। যারাই দায়ী হোক আমরা ফাঁসি চাই।’ একই দাবি করেন নিহত শিশু মনিরের বাবা আবদাল মিয়া।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে আজ শনিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
আজ দুপুর থেকে বিভিন্ন সময়ে আলাদাভাবে মানববন্ধন করে স্থানীয় ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, বাহুবল ডিগ্রি কলেজ, মিরপুর উন্নয়ন ফোরাম ও সানসাইন ক্যাডেট হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।
বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মামলার তথ্য উদঘাটনের জন্য এখনো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করতে পারব।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হওয়ার পাঁচদিন পর বালুর নিচ থেকে উদ্ধার হয় শিশু শুভ, মনির, তাজেল ও ইসমাইলের লাশ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।