খাগড়াছড়িতে বাঙালি ছাত্র পরিষদের মিছিলে পুলিশের বাধা
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের একটি মিছিলে পুলিশ বাধা দেওয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খাগড়াছড়ির বাবুছড়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ব্যাটালিয়ন নিয়ে আদিবাসী সন্ত্রাসীরা ষড়যন্ত্র করছে এবং পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার চালিয়েছে এমন অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদ করে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ।
পরিষদের নেতা-কর্মীরা আজ মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদালত সড়কের দিকে যেতে চাইলে শাপলা চত্বর এলাকায় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ব্যানার কেড়ে নিতে চাইলে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয়। দুই পুলিশ সদস্য অস্ত্র তাক করে গুলি করতে চাইলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি আদালত সড়কের ভাঙ্গা ব্রিজ ঘুরে এসে শাপলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
সমাবেশে বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি সাহাজুল ইসলাম সজল অভিযোগ করে বলেন, ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অব্যাহত খুন, গুম ও চাঁদাবাজিতে স্থানীয় জনগণ অতিষ্ঠ হলেও প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবার পরিকল্পতিভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেছে। কমলছড়িতে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়ে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
আজকের মিছিলে বিনা উসকানিতে দায়িত্বরত দুই পুলিশ সদস্য গুলি করতে উদ্যত হওয়ায় অবিলম্বে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, ইউপিডিএফ-সমর্থিত দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির নামে সন্ত্রাসীরা বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধিতা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার পদযাত্রার নামে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
অবিলম্বে বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের কাজ শেষ করাসহ হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। অন্যথায় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ হরতাল-অবরোধসহ কঠিন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন।
গত রোববার খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়ার কার্বারী টিলা এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থিত ভূমিরক্ষা কমিটির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৯ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হন।
এ বিষয়ে ইউপিডিএফের সংগঠক কিশোর চাকমা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, দীঘিনালার বাবুছড়ায় নির্মাণাধীন ৫১ বিজিবি সদর দপ্তর অভিমুখে ইউপিডিএফ সমর্থিত দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংগঠনের দাবি ছিল, দীঘিনালা ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর অন্যত্র স্থানান্তর এবং উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবারকে নিজ জমিতে পুনর্বাসন। এ দাবিতে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ বাবুছড়া অভিমুখে পদযাত্রা করে। পদযাত্রাটি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কার্বারী টিলা এলাকায় পৌঁছালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। এ পর্যায়ের ক্ষিপ্ত হয়ে ভূমি রক্ষা কমিটির লোকজন ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে অগ্রসর হলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান এনটিভি অনলাইকে বলেন, ‘কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। প্রাণ রক্ষায় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি করা হয়।’ হামলায় তিনিও আহত হয়েছেন বলে জানান। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরো আট সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।