আমি মাইনাস থ্রিয়ের বলি : এরশাদ
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘হাসিনা-খালেদাকে কেউ সরায়নি। আমাকে সরানো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে আমার দলের লোক ষড়যন্ত্র করেছিল। আমি মাইনাস থ্রিয়ের বলি।’
আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুরের শহীদ বঙ্গতাজ মিলনায়তনে মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন এরশাদ। সম্মেলনে আব্দুস সাত্তার মিয়াকে সভাপতি ও জয়নাল আবেদীনকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমাকে বলা হতো স্বৈরাচার। এখন কোনো স্বৈরাচার দেশ পরিচালনা করে। কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয় মানুষ আমার চেয়ে ভালো জানে না। আমি কোনো মানুষের ক্ষতি করি নাই। কোনো মানুষকে হত্যা করি নাই। আমার সময়ে কোনো মানুষ গুম হয় নাই। আমার সময়ে খবরের কাগজ মুক্ত হাতে লিখতে পারত আমার বিরুদ্ধে। কারো বিরুদ্ধে অ্যাকশন গঠন করি নাই। এখন কেউ লিখতে পারে না। কেউ বলতে পারে না। সবকিছু এখন বন্ধ। বন্ধ কারাগারে বাস করছি। মুক্ত তো হতে হবে একদিন। নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্ত হতে হবে আমাদের। আমরা সেজন্য প্রস্তুত।’
এইচ এম এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি আমাকে জেলে দিয়েছিল। তারা ১৪ বছর ৯ মাস পর আমার বিরুদ্ধে মঞ্জু হত্যার মামলা দিয়েছে। ২৫ বছর ধরে এ মামলা চলছে। ২৫ বছর একটি মামলা চলতে পারে না। আমি মুক্ত মানুষ নই, মুক্ত রাজনীতিবিদ নই। আমার মনে যে জোর আছে তাতে আমাকে কেউ বন্দি করে রাখতে পারবে না।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এক-এগারোর কুশীলবদের বিচারের ব্যাপারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এক। মাইনাস টু এর ব্যাপারে বিএনপি আওয়ামী লীগ এক। এখানে মাইনাস থ্রি করা হয়েছিল এ কথা কেউ বলে না। আমি মাইনাস থ্রিয়ের বলি। সে সময় আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান থাকতে পারিনি। পার্টির কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। ষড়যন্ত্র করে আমাকে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছিল।’
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘যারা আমাকে সরিয়ে দিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছিল তাদের সঙ্গে হাত মিলানো উচিত না।’
এরশাদ আরো বলেন, ‘যে দলটি আমাকে জেলে পাঠিয়েছিল তাদের অস্তিত্ব আজ টলটলয়মান। তাদের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। তাদের অস্তিত্ব কেবল টিভিতে একটি বয়ান দেওয়া। এর বাইরে কিছু নেই।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি নেই। পার্টির জন্য আমার মতো কষ্ট আর কেউ করেনি। জেলখানায় থেকে সে সময় ৩৫টি আসনে নির্বাচিত হয়েছি। আমি একা পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছি। এতে প্রমাণিত হয় আমি নিন্দিত ছিলাম না। আমি নন্দিত ছিলাম।’
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সাল চিশতি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মো. আরিফ খান, বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, নূরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. বেলাল হোসেন, পার্টি চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী মেজর (অব.) খালিদ।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর জাতীয় পার্টির নেতা শরিফুল ইসলাম শরিফ, হারুন অর রশীদ, ইসমাইল হোসেন, মহানগর যুব সংহতির সভাপতি জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন, জাতীয় ছাত্রসমাজের মহানগর শাখার সভাপতি ইয়াজ উদ্দিন সরকার প্রমুখ।