মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা বলে নিখোঁজ দুই যুবক
দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ কাউছার ও গোলাপ মিয়া নামের নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুই যুবক। সংঘবদ্ধ দালালচক্র মালয়েশিয়ায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুই যুবক কোথায় আছে, কীভাবে আছে জানার জন্য দুই যুবকের বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজন হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোথাও কোনো হদিস করতে পারছেন না।
শনিবার কাউছারের সন্ধানে তাঁর মা দেলোয়ারা বেগম, স্ত্রী তানিয়া ও একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া তাবাসসুম জুঁই নরসিংদী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা দুই যুবককে প্ররোচনা দিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ করেন। গত বুধবার বিদেশে পাচারকারীদের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত বাবুলকে গ্রেপ্তার করেন নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি বিশেষ দল। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে দুই যুবকের সন্ধান পাওয়া যাবে বলেও তাদের দাবি।
তারা জানিয়েছে, রায়পুরা উপজেলার মির্জানগর গ্রামের কাউছার মিয়া ও গোলাপ মিয়া দেশে থাকার সময় সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন। দুই বছর আগে একই গ্রামের হানিফ তাঁদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাতে থাকে। মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাবুল ও বেদন মিয়ার পক্ষে তিনি দালাল হিসেবে কাজ করতেন। দালালের খপ্পরে পড়ে ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি কাউছার মিয়া ও গোলাপ মিয়া মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এর পর ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় কাউছার একটি মোবাইল ফোনে স্ত্রী তানিয়া, বাবা হানিফ, মা দেলোয়ারা বেগম ও তার মেয়ের জুঁইয়ের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা বলেন। তিনি জানান, ওই দিন রাতেই তিনি জাহাজে উঠবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কাউছার মালয়েশিয়ায় পৌঁছে গেছেন বলে দালাল জানিয়েছিলেন। তিন লাখ টাকা দিলে কাউছার চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন বলেও জানায় দালাল। পরিবারের লোকজন প্রত্যুত্তরে জানায়, কাউছার তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বললে নিশ্চিত হয়ে তারা টাকা দেবেন। কিছুক্ষণ পর দালাল হানিফ জানান, কয়েক মিনিট পর কাউছার ফোনে কথা বলবেন। এরপর কাউছারের নাম করে এক ব্যক্তি ফোন দেন বাবার কাছে। কথা বলার সময় ফোনে কাউছারের কণ্ঠের সঙ্গে মিল না পেয়ে বাবা হানিফের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ফোনের কাউছারকে পারিবারিক কয়েকটি প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। এর পর ফোনের লাইন কেটে দেন। এতে কাউছারের বাবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে এটি দালাল চক্রের কারসাজি।
পরিবার জানায়, হানিফ দালালের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি কোনোভাবেই বলতে চাননি। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাকে চাপ দিলে তিনি জানান, হাসনাবাদ পশ্চিমপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়াপ্রবাসী বেদন মিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও রায়পুরা অঞ্চলের দালাল চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। এ চক্রেরই একটি নিম্ন পর্যায়ের সদস্য হচ্ছেন হানিফ মিয়া। তিনি বেদন মিয়া ও চট্টগ্রামের চক্রের নির্দেশে কাজ করেন। এ ছাড়া আর কিছুই তিনি জানেন না। তাঁদেরই নির্দেশে তিনি কাউছার ও গোলাপ মিয়াকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দালালদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।
এর পর থেকে কাউছার ও গোলাপ মিয়ার আত্মীয়স্বজন তাঁদের সন্ধানে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কয়েক দিন আগে কাউছার মিয়ার মা দেলোয়ারা বেগম প্রেসক্লাবে গিয়ে ছেলে হারানোর কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একইভাবে তাঁর স্ত্রী তানিয়া তাঁর একমাত্র শিশুকন্যা জুঁইকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে স্বামীর সন্ধান করছেন। কিন্তু কোথাও খোঁজ মিলছে না।