হবিগঞ্জে শিশু হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আট বছরের শিশুকে গলা টিপে হত্যার দায়ে আবদুর রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া মামলার অন্য দুই আসামি সিরাজ ও সালেককে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন এ রায় দেন।
মামলার বিবরণের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসলি (পিপি) অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী জানান, বানিয়াচং উপজেলা সদরের ত্রিকর মহল্লার মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী আবদুল হামিদের ছেলে মেহেদী হাসান রাসেল ২০০৭ সালের ৮ অক্টোবর বেলা ১টার দিকে বিদেশ থেকে বাবার পাঠানো মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করছিল। এ সময় পাশের বাড়ির জালাল উদ্দিনের ছেলে আবদুর রশিদ (২৪) মোবাইল ফোনসেটটি কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মেহেদী তাকে সেটি না দেওয়ায় রশিদ তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। মেহেদীর মা এ দৃশ্য দেখে ফেলেন। তিনি ঘটনাটি পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালে তারা রশিদ ও মেহেদীকে খুঁজতে থাকেন।
সিরাজুল হক আরো জানান, একপর্যায়ে রশিদকে একা পেয়ে এলাকাবাসী তৎকালীন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে রশিদ মেহেদীকে অপহরণের কথা অস্বীকার করলে জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। এ সময় তার শরীরে লুকিয়ে রাখা মোবাইল ফোনটি মাটিতে পড়ে যায়। ফলে তিনি মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করেন এবং মেহেদীকে দোয়াখানী মহল্লার গেদাউল্লার ছেলে সিরাজ ও সালেক নিয়ে গেছে বলে তথ্য দেন।
রশিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সন্ধ্যায় বানিয়াচং থানার তৎকালীন দারোগা ফরিদ আহমদ দোয়াখানী মহল্লায় তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালান। কিন্তু সেখানে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই দিন রাতভর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রশিদ শিশু মেহেদীকে হত্যা করেছেন বলে মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয় বলে জানান পিপি।
রাষ্ট্র পক্ষের এ কৌঁসলি আরো জানান, পরে আরো জিজ্ঞাসাবাদে শিশু মেহেদীকে গলা টিপে হত্যার পর লাশটি চৌধুরীপাড়া প্রাইমারি স্কুলে উত্তর পাশের খালে কাঁদামাটিতে পুঁতে রেখেছেন বলে স্বীকার করেন রশিদ। পরের দিন দুপুরে পুলিশ রশিদকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে শিশু মেহেদীর লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় শিশুর মা স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে বানিয়াচং থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে রশিদ ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে এবং ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ শেষে দীর্ঘ আট বছর সাড়ে চার মাস পর এ রায় প্রদান করা হলো।