কিশোরগঞ্জে বিয়াম স্কুল ঘেরাও করে কক্ষে তালা
কিশোরগঞ্জের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল ঘেরাও করে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে আজ বুধবার তালা ঝুলিয়ে দেয় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস চলাকালে হঠাৎ আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে প্রবেশ করায় খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনকারীরা জানায়, কিশোরগঞ্জের ১৩৪ বছর পুরোনো ঐতিহ্যবাহী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসটি ২০০৬ সালে মাসিক ২২ হাজার টাকায় সরকারি সিদ্ধান্তে দুই বছরের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছিল বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এখনো তাদের ছাত্রাবাস ফিরে পায়নি।
বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, এর সংলগ্ন পুকুর ও খেলার মাঠ ফিরে পাওয়ার দাবিতে এবার আন্দোলনে নামে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
এর অংশ হিসেবে আজ বুধবার দুপুর ১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল গনি ঢালি লিমন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলীর নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলে ঢুকে পড়ে।
মিছিলকারীরা স্কুলের মাঠে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা ছাড়াও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্ররা বক্তব্য দেয়।
সমাবেশ থেকে ছাত্রাবাসের অভাবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছাত্রদের আবাসন সমস্যা এবং খেলার মাঠ ও পুকুর বেদখল থাকায় বিভিন্ন অসুবিধার কথা উল্লেখ করে অবিলম্বে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সেই সাথে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
এ সময় ছাত্রলীগের নেতা শফিকুল গনি ঢালি লিমন ১০ দিনের সময় দিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যদি এরপরও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ফিরিয়ে না দেওয়া হয় তবে লাগাতার কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ সমাবেশ শেষে ছাত্রলীগের নেতারা কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
ঘণ্টাব্যাপী ঘেরাও কর্মসূচি পালন শেষে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। জেলা প্রশাসক এস এম আলম সেখানে উপস্থিত হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করার পর কর্মসূচি আজকের মতো শেষ করে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে হঠাৎ স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিয়াম স্কুলে প্রবেশ করায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে। অনেকেই কাঁদতে শুরু করে। খবর পেয়ে অনেক অভিভাবক স্কুলে ছুটে এসে সন্তানদের নিয়ে যান। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জামিল আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহাসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিয়াম স্কুলে আসেন।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ শামীমা ইয়াসমীন।
সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম আবদুল্লাহ জানান, ‘ভাড়া নিলেও আজ পর্যন্ত কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি বিয়াম স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমনকি দুই বছর পর ভাড়ার চুক্তি নবায়নও করা হয়নি। বিয়াম স্কুলকে ভাড়া দেওয়ার সময় কথা ছিল নিজস্ব ভবন নির্মাণ করা শেষ হলে তারা সেখান থেকে স্কুল সরিয়ে নেবে। কিন্তু তাও করা হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জামিল আহমেদ বলেন, সরকারি সম্পত্তির ওপর বিয়াম স্কুল নির্মিত হয়েছে। তাই সরকারই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। এভাবে স্কুলে ঢুকে মিছিল-সমাবেশ করা ঠিক হয়নি। এটা খারাপ নজির হয়ে থাকবে।