হবিগঞ্জে বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষ, তিন মাসের শিশু খুন
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মশাজান-নোয়াবাদ এলাকায় খোয়াই নদীর বালু উত্তোলন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে তিন মাসের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গভীর রাতে নোয়াবাদ গ্রামের আবদুল কাদিরের স্ত্রী শাহিদা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত শিশু তাছপিয়া আক্তার প্রমীর বাবা নোয়াবাদ গ্রামের আম্বর আলী। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
নিহত শিুশুর পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, মশাজান এলাকায় খোয়াই নদীর বালুমহাল থেকে জেলা ছাত্রলীগ নেতা মুছা আহমেদ রাজুসহ সংগঠনটির কয়েক নেতাকর্মী কিছুদিন ধরে বালু উত্তোলন করছিলেন। তাঁদের বালুমহালটি দেখাশোনা করেন পার্শ্ববর্তী নোয়াবাদ গ্রামের আমজাদ আলী। গত শনিবার বেলা ১১টায় ওই মহাল থেকে বালু আনার সুবিধার্থে রাস্তার কয়েকটি গাছ কেটে ফেলে বালুমহালের ইজারাদার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে বাধা দেয় মশাজান গ্রামের মন্নর আলী ও তার সমর্থকরা। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে মন্নর আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন শিশু তাছপিয়ার চাচা আমজাদ আলী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রোববার রাত ১০টার দিকে মন্নর আলীর লোকজন পুলিশের উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আম্বর আলীর ঘরে ঢুকে তার শিশু তাছপিয়াকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
নিহত শিশু তাছপিয়া আক্তার প্রমীর মা আছমা আক্তার অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষের মন্নর আলী, আবদুল কাদির, মতি মিয়া, কুটি মিয়া, সোহেল মিয়া, নজরুল ইসলাম তার ঘরে ঢুকে হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁর কাছ থেকে শিশু তাছপিয়াকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। এমনকি এদের একজন শিশুটির গলায় পা দিয়ে চাপা দেন। এতে তাছপিয়া মারা যায়।
নিহত তাছপিয়া আক্তারের চাচা আমজাদ আলী জানান, মন্নর আলী ও তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে বালু উত্তোলন নিয়ে তাদের বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে দুইদিন ধরে মন্নর আলী তাদের ওপর অত্যাচার চালিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন মন্নর আলী ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালান।’
নিহত শিশুর ছোট চাচা ইছাক আলী জানান, মন্নর আলীর সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা চলছে। রাতে তাঁদের বাড়িতে মন্নর আলী ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ সময় তাঁরা কয়েকটি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
শিশু তাছপিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে হাসপাতালে যান হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাসুদুর রহমান মনির। হাসপাতালে শিশুটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন পুলিশকে দেখান তার চাচি।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, বালুমহাল নিয়ে দুইদিন ধরে সংঘর্ষ হচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘রাতেও মূলত বালু উত্তোলনের ঘটনার বিরোধ নিয়েই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাছপিয়া নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পেয়েছি। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না শিশুটি কীভাবে মারা গেছে।’
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডা. রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না শিশুটি কীভাবে মারা গেছে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণের কারণে শিশুটি মারা গেছে।’
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে গভীর রাতে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন নোয়াবাদ গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুল কাদিরের স্ত্রী শাহিদা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেন। আবদুল কাদিরসহ অন্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।