ভোলার পানিবন্দি মানুষ খোলা আকাশের নিচে
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে অতি জোয়ারের পানিতে ভোলার বিভিন্ন উপজেলার হাজারো মানুষ এখন পানিবন্দি। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, ত্রাণ কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে, সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখন পর্যন্ত করতে পারেনি প্রশাসন।
‘রোয়ানু’র প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান ও তজুমদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ও ভাঙা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তজুমদ্দিন উপজেলা। উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ গ্রাম ও উপজেলা সদরের বাজার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এতে ১০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন। তবে প্রশাসন এখনো পুরো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করতে পারেনি।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানিয়েছে, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে আর ভাটায় পানি নেমে যাচ্ছে। তাতে রান্না করা যাচ্ছে না। সরকার পর্যপ্ত ত্রাণ দিচ্ছে না। বিশুদ্ধ পানি না পাওয়ার অভিযোগও করেন তাঁরা। বসতবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় বহু পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আক্তার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ভোলায় পাউবোর প্রায় ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাড়ে আট কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া দুই কিলোমিটার ক্লোজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
তজুমদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসায়ী দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে তাঁদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।
বাজারের পাশেই চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ গ্রামের পাঁচ শতাধিক টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।
উপজেলার দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধ না থাকায় ওই পাশ দিয়ে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে প্রায় ২৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমির হোসেন। তিনি আরো জানান, ঝড়ে ৮৫টি মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মূল্য প্রায় ১৭ লাখ টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, রোয়ানুর প্রভাবে ভোলা জেলায় চার হাজার ৩৫৯টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে মনপুরা উপজেলায় আড়াই হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ৩৪৪টি ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহা. সেলিম উদ্দিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো সম্ভব হবে। তবে ত্রাণ পৌঁছার বিষয়ে তিনি বলেন, যথাযথভাবেই ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।