আজকের সরকার গণমুখী সরকার নয় : সন্তু লারমা
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গণমুখী নয় বলে মন্তব্য করেছেন আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।
সন্তু লারমা বলেছেন, ‘আদিবাসী সমাবেশের মাধ্যমে বন মন্ত্রণালয়কে জানাতে চাই, এটা আদিবাসীদের জমি। এ জমি আদিবাসীরা কোনো অবস্থাতেই ছাড়বে না। ৪৫ বছর ধরে দেখে আসছি আমাদের দেশে কোনো গণমুখী সরকার আসেনি। আজকের সরকারও গণমুখী সরকার নয়। এ সরকার কখনো আদিবাসীবান্ধব সরকার হতে পারে না। আমরা আদিবাসীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
শুক্রবার টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের গায়রা মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু) ও মধুপুর সম্মিলিত আদিবাসী সমাজ আয়োজিত সংরক্ষিত বনের নামে মধুপুর থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা আরো বলেন, ‘আজকের সমাজব্যবস্থায় মধুপুর অঞ্চলের নির্মম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ছিল, সে চেতনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় বাস করছে। তাই আদিবাসীরা বারবার প্রতারিত হচ্ছে। আদিবাসীদের থাকতে হবে নিজস্ব নেতৃত্ব, নিজস্ব দল। আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে আন্দোলন বাস্তবায়ন করতে পারব না। জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে গারোদের নেতৃত্ব বিভক্ত। এ বিভক্ত রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে ন্যাশনাল পার্কের জন্য আন্দোলন হয়েছিল। আজ আবার অনেক বছর পর ভূমি নিয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠী আজ পর্যন্ত আমাদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে পারেনি। পঞ্চদশ সংশোধনী আদিবাসীদের জন্য বিপজ্জনক, ভয়ঙ্কর।’
মহাসমাবেশে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডেনি দ্রংয়ের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত, ঐক্য ন্যাপ নেতা পংকজ ভট্টাচার্য, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক প্রমুখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, সরকার আদিবাসী প্রশ্নে অন্ধ। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ভারতের বন আইনে বলা হয়েছে, বনে শুধু গাছপালা, পশুপাখি থাকে না, মানুষও থাকে। যে সরকার বনের ভেতরকার মানুষগুলোকে দেখে না, সে সরকার অন্ধ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেন, মধুপুরের বনকে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা বন আইনের নামে আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা। অধিকার ও দখল সূত্রে এটা আদিবাসীদের ভূমি।
ঐক্য ন্যাপ নেতা পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘গারোদের দ্বারা আখেরি মুক্তিযুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে ভূমির, ইজ্জতের লড়াই হবে। মরব তবু ভূমি ছাড়ব না।’
এই মহাসমাবেশে মধুপুর গড় এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, আদিবাসী নারী-পুরুষ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।