মাকে দেখা হলো না ইমাম আলাউদ্দিনের
কথা ছিল শতবর্ষী মাকে দেখার জন্য দেশে ফিরবেন। সঙ্গে এক ছেলে আসার কথা ছিল। সব প্রস্তুতি শেষে বিমানের টিকেটও কাটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই গতকাল শনিবার দুপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে প্রাণ দিতে হলো নিউইয়র্কের কুইন্সের আল-ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাসিন্দা মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জীকে (৫৫)। তাঁর সঙ্গে গুলিতে প্রাণ হারান মসজিদেরই খাদেম তারা উদ্দিন (৬৪)।
মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জীর গ্রামের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার ২ নম্বর আহমেদাবাদ ইউনিয়নের গোছাপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা মাওলানা শামসুদ্দিন আখঞ্জী ছিলেন পুঁথি সাহিত্যিক ও আলেম। মাওলানা আলাউদ্দিনের তিন মেয়ে ও পাঁচ ছেলে। বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নাঈমা ও তাঁর স্বামী আগে থেকেই আমেরিকাপ্রবাসী। তিনিই বাবা আলাউদ্দিনকে ২০১১ সালে নিউইয়র্কে নিয়ে যান।
গতকাল দুপুরে কুইন্সের আল-ফুরকান জামে মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জী ও তাঁর সহকারী তারা উদ্দিন। বন্দুকধারী খুব কাছ থেকে দুজনকে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দুজন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আলাউদ্দিন। আর হাসপাতালে নেওয়ার কিছু পরে মারা যান তারা উদ্দিন।
মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জীর ভাগ্নে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহমেদ আজ রোববার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, বড় মেয়েই তাঁর বাবা আলাউদ্দিনকে আমেরিকায় নিয়ে যান। আলাউদ্দিন সেখানে স্ত্রী, চার ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন। এক ছেলে ফয়েজ উদ্দিন আখঞ্জী থাকেন শায়েস্তানগরের নিজস্ব বাসায়। শতবর্ষী মা থাকেন চুনারুঘাট উপজেলার গোছাপাড়া গ্রামের বাড়িতে। আমেরিকায় যাওয়ার আগে আলাউদ্দিন হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। তাঁর আরেক ভাই নাসির উদ্দিন আখঞ্জী হবিগঞ্জ শহরের টাউন মসজিদের ইমাম।
ফখরুল আহমেদ আরো জানান, এখানো দুজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আজ দুপুরের পর বড় মেয়েকে লাশ দেখতে দিয়েছে পুলিশ। সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
নিহতের লাশ দেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে ফখরুল আহমেদ জানান, পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা আছে গ্রামের বাড়ি লাশ নিয়ে আসার। তবে এ ব্যাপারে এখানো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানকার বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে মাওলানা আলাউদ্দিনের মৃত্যুর খবর পৌঁছার পর পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আজ দুপুরে ছেলে ফয়েজ উদ্দিন আখঞ্জীর শায়েস্তানগরের নিজস্ব বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে জড়ো হয়েছেন। আত্মীয়স্বজনদের কান্নায় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীসহ ইমাম আলাউদ্দিনের একসময়ের সহকর্মীরা।
এ ছাড়া মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জীকে হত্যার প্রতিবাদে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় হবিগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন মুসল্লিরা। মিছিলটি চৌধুরী বাজার জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রদান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।