সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক খালেকদাদ চৌধুরীর ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার।
১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর এই কৃতী সাহিত্যিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন।
খালেকদাদ চৌধুরীর ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মরহুমের মোক্তারপাড়ার বাসভবনে কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
খালেকদাদ চৌধুরী নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার চানগাঁওয়ে ১৯০৭ সালে তাঁর নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯২৪ সালে নেত্রকোনার দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৪ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে সুনামের সঙ্গে আইএ পাস করেন খালেকদাদ। পরে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হন।
১৯২২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবি বন্দে আলী মিয়া সম্পাদিত বিকাশ পত্রিকায় খালেকদাদ চৌধুরীর লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। তিনি কলকাতা করপোরেশনের একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৪১ সালে তথ্য অফিসার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। একই সময় তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘দৈনিক নবযুগ’ পত্রিকার শিশু বিভাগ সম্পাদনা করতেন। সেই সূত্রেই কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল।
১৯৬১ সালে সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন খালেকদাদ চৌধুরী। সে সময় নেত্রকোনা থেকে ‘উত্তর আকাশ’ নামে মাসিক সাহিত্য পত্রিকা বের করেন। তাঁর সম্পাদিত বহুল আলোচিত ‘উত্তর আকাশ’ সাহিত্য পত্রিকাকে কেন্দ্র করে সে সময় নেত্রকোনায় গড়ে উঠেছিল কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের এক মিলনমেলা।
এই পত্রিকায় সাহিত্যচর্চা করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, হেলাল হাফিজ, রফিক আজাদ, জীবন চৌধুরী, শান্তিময় বিশ্বাসসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি চালু ছিল।
কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বই পড়ার অভ্যাস এবং আলোকিত মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই সাহিত্যিক ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন নেত্রকোনা সাধারণ গ্রন্থাগার। সেই গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ‘সৃজনী’ নামে আরেকটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
খালেকদাদের লেখা ও প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে ‘রক্তাক্ত অধ্যায়’, ‘একটি আত্মার অপমৃত্যু’, ‘এ মাটি রক্তে রাঙ্গা’ এবং ‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’ উল্লেখযোগ্য। তিনি বিখ্যাত ‘মরু সাহারা, ‘বাহার-ই-স্তান-ই-গায়েবী’ ‘ওরসে কারবালা’ ও ‘বেদুইনের মেয়ে’ নামের গ্রন্থের অনুবাদক।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি ১৯৮৩ সালে তাঁকে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত করে।
সৃজনশীল সাহিত্যচর্চার বিকাশ এবং কথাসাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্যকর্ম নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই নেত্রকোনা সাহিত্যসমাজ ১৪০৩ সাল থেকে পয়লা ফাল্গুন বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসব ও খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে আসছে। এরই মধ্যে দেশবরেণ্য অনেক কবি-সাহিত্যিক এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।