অ্যাটকোর সভাপতি আবার তিনদিনের রিমান্ডে
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সভাপতি, এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীকে আবারও তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও থানায় দায়ের করা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে মোসাদ্দেক আলীকে মহানগর হাকিম মাহবুবুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়।
বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল ইসলাম গাড়ি ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বাড্ডা থানায় ১ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মোসাদ্দেক আলীর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি যেদিন গ্রেপ্তার (১ ফেব্রুয়ারি), সেদিনই আরেকটি মামলা। এ মামলায় আবার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে আজ। এ মামলায় বলা আছে কে বা কারা ককটেল নিক্ষেপ করেছে, আর গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পুলিশ ফরোয়ার্ডিংয়ে আছে নির্দেশনা, অর্থ জোগান, পেট্রলবোমা থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা তিনি (মোসাদ্দেক আলী) করেননি। অথচ এজাহারে কিছুই নেই।’
মোসাদ্দেক আলীকে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা আটক করেন। সে সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মোসাদ্দেক আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্টো রোডের ডিবি সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরদিন গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি খিলগাঁও থানায় দায়ের করা মামলায় মোসাদ্দেক আলীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মহানগর হাকিম হাকিম হাসিবুল হক মোসাদ্দেক আলীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে টঙ্গীগামী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে পেট্রলবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে তিনজন দগ্ধ হয়। এ ঘটনায় গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের মালিক নজরুল ইসলাম খিলগাঁও থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনের কথা বলা হয়েছে। এজাহারে গাড়িতে বোমা নিক্ষেপের প্ররোচনাকারী হিসেবে এম কে আনোয়ার, সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী এবং মারুফ কামাল খানসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের ১৫ কেন্দ্রীয় নেতার নাম আছে। তবে মামলায় কোথাও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীর নাম নেই। তারপরও এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। মোসাদ্দেক আলীর আইনজীবীরা আদালতকে জানান, ‘খিলগাঁও এলাকার যে জায়গায় গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, সেই এলাকায় মোসাদ্দেক আলীর পৈতৃক বাড়ি থাকলেও তিনি সেখানে থাকেন না। এমনকি ঘটনার সময়ও তিনি ওই এলাকায় যাননি।’ মামলাটি নিছক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। উভয় পক্ষের শুনাশি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মহানগর হাকিম।
মোসাদ্দেক আলীকে গ্রেপ্তারের পর থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানও পৃথক বিবৃতিতে নিন্দা জানান।
এ ছাড়া মোসাদ্দেক আলীর মুক্তির দাবিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও স্যাটেলাইট টিভি দর্শক ফোরাম নামের দুটি সংগঠন রাজধানীতে সমাবেশ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রবাসী সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতির্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মোসাদ্দেক আলীর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অব্যাহত রেখেছেন।