প্রশাসন-পুলিশের যোগসাজশে মানব পাচার!
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এক যুগ ধরেই মানব পাচার বাড়ছে। দালালদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে এটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
অপরাধ বিশ্লেষক নূর খানের মতে, অপরাধ দমনে পুলিশের উদ্যোগের অভাবেই বেড়েছে মানব পাচারের ঘটনা। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়টি জানার পরও তাদের কেউ কেউ এর সঙ্গে অনৈতিকভাবে জড়িয়ে পড়ছে। দালালদের কাছ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া মানুষের মাথাপিছু টাকা তারা সংগ্রহ করেছে, এ ধরনের অভিযোগ আমরা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে শুনতে পেয়েছি। আসলে শর্ষের ভেতরেই যদি ভূত থাকে, সে ভূতকে তাড়ানোর দায়িত্ব এখন সরকারকে গুরুত্বসহকারে নিতে হবে।’ প্রয়োজনে বিশেষ নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলার দাবিও জানান এই অপরাধ বিশ্লেষক।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ২৪ জন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মানব পাচারবিরোধী মতবিনিময় সভায় স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তালিকাভুক্ত এক পাচারকারীর উপস্থিতি বিস্ময় জাগিয়েছে টেকনাফবাসীকে। এ বিষয়ে টেকনাফ থানার কোনো পুলিশ কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে পুলিশ-সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কথা বলেছেন পুলিশপ্রধান।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘যদি কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ থাকে, তা যদি প্রমাণ হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং আইনগত ব্যবস্থা উভয়ই নেব। এ বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স, আমরা কোনোক্রমে এ ধরনের পুলিশ সদস্যদের আমাদের ডিপার্টমেন্টে রাখব না।’
২০১২ থেকে মানব পাচার ভয়াবহতা রূপ লাভ করলেও প্রশাসন ছিল নির্লিপ্ত। গণকবরের সন্ধান লাভের পর নড়চড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে গ্রেপ্তার ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা ঘটে।
তবে সেভাবে আলোচিত না হওয়ায় বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়নি বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়নের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ বলেন, ‘এগুলো কিন্তু আমাদের একটা চলমান প্রক্রিয়া, আপনাকে জিনিসটা বুঝতে হবে। যেহেতু একটা গণকবর নিয়ে এখানে একটা বিষয় উঠে আসছে, সে জন্য কিন্তু আমরা এটাকে বেগবান করেছি, এটা আপনাকে বলতে পারি। বিষয়টা যে আগে ছিল না এখন শুরু করেছি, এটা কিন্তু বলা যাবে না।’
স্থানীয় ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম থেকে ফিশিং বোটের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে শুরু হয় সাগরপথে মানব পাচার। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বদরমোকামের সঙ্গে মানব পাচারের ঘাট হিসেবে যুক্ত হয় শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, গোলারচর ও জেটিঘাট। দালালপ্রথা শুরু হয় ২০০৯ সালে। ২০১০ থেকে বাড়তে থাকে পাচার ও রুটের সংখ্যা। গড়ে ওঠে আলাদা সিন্ডিকেট, যার ভয়াবহতার প্রমাণ মেলে থাইল্যান্ড সীমান্তে খুঁজে পাওয়া গণকবর এবং সমুদ্র থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের উদ্ধার।