বাসচাপায় নিহত ২, পুলিশ হেফাজতে এএসআই
শ্রাবণ পরিবহণের একটি বাস চলছিল। রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় নাসিরউদ্দিন নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে ধাক্কা দেয় বাসটি। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে বাসের চালক এবং চালকের সহকারী বাসটি ফেলে দ্রুত পালিয়ে যান।
দুর্ঘটনাটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন কাপ্তান বাজারের সামনে ঘটে। ব্যস্ত সড়কে দুর্ঘটনার পর বাসটি রাস্তায় পড়ে ছিল। ফলে, যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ সময় পল্টন থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এমাদুল হক দুর্ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর, নাসিরউদ্দিন নামের ওই পুলিশ কনস্টেবল যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে নাসিরউদ্দিন এ দুর্ঘটনা শিকার হন।
দ্রুত আহত নাসিরউদ্দিনকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে, সড়কে যানজট তৈরি হওয়ায় বাসটি সরানোর প্রয়োজন দেখা দেয়৷ ফলে, এএসআই এমাদুল হক নিজেই চালকের আসনে বসেন। বাসটি চালানো শুরু করেন। উদ্দেশ্য আহাদ পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছি স্থানে বাসটি জব্দ করে রাখা।
এমাদুল হক চালাতে চালাতে বাসটি যখন আহাদ পুলিশ ফাঁড়ির কাছে আসে, তখন নিয়ন্ত্রণ হারান। বাস উঠে যায় সড়ক বিভাজকের ওপর। পুনরায় ঘটা এ দুর্ঘটনায় বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন চার জন পথচারী। উদ্ধার করে দ্রুত তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত শুক্কুর মাহমুদ (রুবেল) ও রাইসুল কবিরকে (তুষার) মৃত ঘোষণা করেন। অপর দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। মৃত শুক্কুর মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। আর রাইসুল কবির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন এনটিভি অনলাইনের কাছে। শামীম হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় এএসআই এমাদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন পল্টন থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন।’
শামীম হোসেন বলেন, ‘শুনেছি পুলিশ কনস্টেবল নাসিরউদ্দিন ওয়ারি থানায় কর্মরত। নাসিরউদ্দিন যখন হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন, তখন তিনি নিজ কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। বাসটি গুলিস্তান-কাঁচপুর-মদনপুর রুটের। ঘটনার সময় এএসআই এমাদুল হক ঘটনাস্থলে আহাদ পুলিশ ফাঁড়ির হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাস জব্দের পর এমাদুল বাসটি নিজেই সরাচ্ছিলেন। তারপর পুনরায় দুর্ঘটনা। নিহত হলেন দুজন।’
শামীম হোসেনের দাবি, ‘এএসআই এমাদুল হক একজন পেশাদার চালক। তাঁর লাইসেন্সও আছে। তিনি যখন কনস্টেবল ছিলেন, তখন গাড়ি চালাতেন। গতকাল শ্রাবণ পরিবহণের বাসটি এমাদুল হক চালাতে চালাতে ব্রেক কষতে যান। কিন্তু, তখন আর ব্রেকে কাজ করেনি। বোধ হয় আগে থেকে ব্রেক নষ্ট ছিল। ফলে, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। তারপর বাস আইল্যান্ডের ওপর উঠে গেল দুজন নিহত হয়। এ সড়কটি সব সময় জনাকীর্ণ থাকে।’
এ ঘটনায় আহত পুলিশ কনস্টেবল নাসিরউদ্দিন একটি মামলা করবেন বলেও শামীম হোসেন জানান। তিনি বলেন, শুক্রবার দিনে হয়তো আহত কনস্টেবল আরেকটি মামলা করবেন। এরই মধ্যে এক ভুক্তভোগীর পরিবার একটি মামলা করেছেন।
এক ভুক্তভোগীর পরিবার সড়ক পরিবহণ আইনে মামলাটি করেছেন পল্টন থানায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই ইমদাদুল। তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হচ্ছে। দায়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, বাসের মূল চালক এবং চালকের সহকারী এখনও আটক হয়নি। পলাতক রয়েছেন। তাঁদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তবে, এ মামলায় কাকে কাকে আসামি করা হয়েছে, তা ইমদাদুল হক বলতে চাননি।
এদিকে, নিহত শুক্কুর মাহমুদের স্ত্রী হাসিনা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্কুর যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। আড়াই মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। শুক্কুরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি। তবে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূইগড়ে বাড়ি আছে তাঁদের।