দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, দুদক মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেপ্তার
দুদকের নামে ভুয়া চিঠি ইস্যু করে এক ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকের (মানিলন্ডারিং) ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) গৌতম ভট্টাচার্যসহ একটি চক্র। এ অভিযোগে গতকাল শুক্রবার (২৪ জুন) মতিঝিলের একটি হোটেল থেকে ঘুষের দেড় লাখ টাকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ।
ডিবি বলছে, এই চক্রে আছেন দুদকের মহাপরিচালকের পিএ গৌতম ভট্টাচার্য, পুলিশ সদস্য (বরখাস্ত) এসকেন আলী খান ও দুই দালাল হাবিবুর রহমান ও পরিতোষ মণ্ডল।
হারুন অর রশীদ জানান, ভুক্তভোগী আশিকুজ্জামান একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী। বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে আমদানি করা কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করেন। গত ১৯ জুন তার স্ত্রী সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদুকের মনোগ্রাম সম্বলিত খাকি রঙের খামে একটি নোটিশ নিয়ে যান একজন অফিসার। তার (আশিকুজ্জামান) বিরুদ্ধে অভিযোগ, কার্পেট ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্ত্রী হাসপাতালে, এ অবস্থায় দুদকের এই অভিযোগ শুনে ঘাবড়ে যান আশিকুজ্জামান। তখন দুদকের কথিত অফিসার আশিকুজ্জামানকে একটু সহানুভূতি দেখানোর ভান করে তাকে মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপনের পরামর্শ দেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামানকে ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং এনএসআইয়ের ভয় দেখিয়ে বলে আপনার দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে সংস্থাগুলো হন্য হয়ে খুঁজছে। দুদক এরইমধ্যে দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে। এ সময় নোটিশ বহনকারী ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ওই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা বলা সমীচীন নয় জানিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দুদক অফিসে স্বশরীরে হাজির হতে বলেন।’
ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঘাবড়ে যাওয়া আশিকুজ্জামানকে দফায় দফায় ফোন দেওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপে। ভয় দেখানো হয় সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে খবর প্রস্তুতিসহ সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদকের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির ভয় দেখানো হয়।’
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সমঝোতা অনুসারে প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরবর্তীতে দিতে বলা হয় এক কোটি টাকা। বিনিময়ে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এক কোটি টাকার ভেতর ২৩ জুন ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়, বাকি টাকা আগামী রোববার ব্যাংক আওয়ারে পরিশোধের সমঝোতা হয়।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী বিষয়টি গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগকে অবহিত করলে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং দুদকের উপপরিচালক নজরুল ইসলামসহ হোটেল হিরাঝিলের আশেপাশে অবস্থান নেয়।’
সমঝোতা অনুসারে ভুক্তভোগী আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে দেড় লাখ টাকা ভরে হোটেলে যান। বাকি টাকা ব্যাংকে দেবেন বলে জানান। তার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে সংরক্ষিত টাকা গ্রহণ করার সময় ডিবি পুলিশ তাদেরকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।
এদের সঙ্গে দুদুক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল আরও কেউ জড়িত আছে কি না, খতিয়ে দেখার জন্য আসামিদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে বলেও জানান হারুন অর রশীদ।