নদী ভাঙনের কবলে টাঙ্গাইলে পাঁচ উপজেলা, নির্ঘুম রাত কাটছে মানুষের
উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই, বংশাইসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার শতাধিক গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরের হাজারও মানুষ। চোখের সামনে নিমিষেই নদীর পেটে চলে যাচ্ছে সহায়-স্থাপনা। ফলে ভাঙন কবলিত মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটল। কালিহাতী উপজেলার আলীপুর ও হাট আলীপুর। সদর উপজেলার চরপৌলি, মামুদনগর। নাগরপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, পশ্চিম তেবাড়িয়া, খাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা মাইজাইল, ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা ও কৃষ্ণ দিয়ার কুল, দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ার টেক, ছিটকি বাড়ি ও মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, পারদিঘী, থলপাড়া, সুতানরি, গোবিন্দপুর, মটেশ্বর, বহনতলী ও মহেড়া ইউনিয়নের টেঘুরি, গোড়াকী ও আদাবাড়িসহ বেশকয়েকটি গ্রামসহ শতাধিক গ্রামে নদী তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। ভাঙনের কারণে গৃহহীন মানুষ খোলা আকাশের নিচে, রাস্তায়, বাঁধে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে ত্রাণ সহায়তা নয় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানায়।
স্থানীয়রা জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে যমুনাসহ অন্যান্য নদীতে আশঙ্কাজনকহারে পানি বাড়ছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত বুধবার দুপুরে ধলেশ্বরী নদীতে ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া চরাঞ্চলে তিল ও পাটসহ নানা ধরণের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলবাসী। মানবেতর জীবনযাপন করছে ভাঙন কবলিতরা।
যমুনার ভাঙনের শিকার ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এক দিনেই তার বসতভিটা যমুনার পেটে চলে গেছে। বাড়ির পাশে থাকা জমিও যমুনা গিলে খেয়েছে। এখন সব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তার থাকার জায়গাটুকুও নেই। জিও ব্যাগও কোনো কাজেই আসছে না। তাই ভাঙন কবলিত জিলকদরা ত্রাণ চান না, ভাঙনরোধে বাঁধ চান।
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক সপ্তায় চিতুলিয়াপাড়ায়, খানুরবাড়ি, ভালকুটিয়া ও গোবিন্দাসীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের নদীপাড়ের মানুষ।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। বন্যা মৌসুম পার হওয়ার পর এই প্রকল্পের আওতায় নাগরপুর অংশের কাজ করা হবে। এ ছাড়া ভূঞাপুর অংশে ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যেটুকুতে বাঁধ নির্মাণ বাকি রয়েছে আগামিতে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির। তিনি ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটাসহ ভাঙনের শিকার বিভিন্ন এলাকা পরিদশন করেছেন। তিনি ভাঙনরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াসহ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন। তার নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
এ সময় ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু, গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদারসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে ছিলেন।
সংসদ সদস্য তানভীর হাসান জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গোবিন্দাসী, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী ও পাটিতাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে তিনি নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।