সাধন চন্দ্র মজুমদার আবারও খাদ্যমন্ত্রী
নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) আসনের পরপর চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার দ্বিতীয় বারের মতো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তিনি দ্বিতীয়বার খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত কামিনী কুমার মজুমদার ও মাতা মৃত সাবিত্রী বালা মজুমদার। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সাধন চন্দ্র মজুমদার অষ্টম। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করার সময়ই তিনি তাঁর বাবাকে হারান
সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চৌমুহনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। তিনি নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। চৌমুহনী কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়ামতপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সংসদ এবং দেশ পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদে সোচ্চার থেকেছেন সবসময়। তিনি জনগণের ভালোবাসার মানুষ। জনগণের আগ্রহে ১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করেন। বিপুল ভোটে হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন সারা দেশে স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র আন্দোলন চলছিল। এ সময় তিনি দলের প্রয়োজনে, নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে দুঃসাহসিক ভূমিকা রাখেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তিনি হাজিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, দুইবার প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দীর্ঘ দিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে সফলতার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগরে মনোনয়নে নওগাঁ-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নওগাঁ-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং ৭ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত হন। তাঁর নেতৃত্বে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার ও ২০২৩ সালে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক লাভ করে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আজ বঙ্গভবনে ফের শপথ গ্রহণ করে দ্বিতীয় বারের মতো খাদ্যমন্ত্রী হন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ করনেশান হল সোসাইটি, বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য। এ ছাড়া তিনি নওগাঁ ব্লাড ব্যাংক, ডায়েবেটিক সমিতি, নিয়ামতপুর ডিগ্রি কলেজ, পোরশা ডিগ্রি কলেজ, সাপাহার মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজের সভাপতি, নওগাঁ সমন্বয় নাট্যগোষ্ঠী এবং বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ রাজশাহীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর সংসদীয় ককাশ গ্রুপের সদস্য ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার এলাকায় মসজিদ, মন্দির নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, গরিব ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার সাহায্য, দুস্থদের চিকিৎসা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সরকারের সহযোগিতায় নির্বাচনি এলাকায় রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার উন্নয়নসহ বহুমুখী উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে মানবসেবা এবং এলাকার উন্নয়নই তাঁর একমাত্র ব্রত। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য তাঁর নির্বাচনি এলাকার তিনটি উপজেলা ও ২০টি ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের সহায়তায় উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে পাকা দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছেন। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন।
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন সেমিনারে থাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সেমিনারে রাশিয়া, বেলারুশ, তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক ও ভারত সফর করেছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সাধন চন্দ্র মজুমদার ১৯৭৪ সালে চন্দনা রাণী মজুমদারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর সহধর্মিণী একজন স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রী মারা যান। পরবর্তী সময়ে তিনি আর বিয়ে করেননি। তিনি চার মেয়ে সন্তানের জনক। বড় মেয়ে সোমা রাণী পেশায় একজন ব্যাংকার, দ্বিতীয় যমজ কন্যার একজন কাবেরী রাণী মজুমদারও একজন ব্যাংকার, অপর যমজ মেয়ে কৃষ্ণা রাণী মজুমদার পেশায় চিকিৎসক এবং ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার ইঞ্জিনিয়ার।
বৃক্ষরোপণ, ভ্রমণ, জনসেবা ও জনসংযোগ সাধন চন্দ্র মজুমদারের প্রিয় শখ। মাঝেমধ্যে পত্রপত্রিকায় কলাম লিখেন তিনি। ২০২৩ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় তাঁর কলামগুলোর সংকলন ‘মনে রাখার দিনগুলো’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ সালে হাজীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন বৃক্ষরোপণে তিনি রাজশাহী বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন।