লাপাত্তা ‘ভাতের হোটেলের’ হারুন
বহু বিতর্কের জন্ম দিয়ে আলোচিত ‘হারুনের ভাতের হোটেল’। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এখন লাপাত্তা।
তীব্র গণআন্দোলনের মুখে দেশ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ সোমবার (৫ আগস্ট) পালিয়ে যান। এরপর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখেমুখে ‘ভাতের হোটেল’-এর হারুনের কথা জানতে চান। রাত ৯টা পর্যন্ত হারুন কোথায় আছেন, তা জানা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
দেশে তিন দিনের সরকারি ছুটি চলছে। গতকাল রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ছুটি ঘোষণা করা হয়। মুখেমুখে প্রচার হচ্ছে অফিস চলাকালীনও ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ ছুটি নিয়েছেন কিংবা চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। যদিও এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
হারুনের যত বিতর্কিত কর্ম
বিভিন্ন সময় দেশের আলোচিতদের ডিবি অফিসে নিয়ে ভাত খাওয়ানোর নামে হুমকি ধামকি দিতেন হারুন—এমন তথ্য জানিয়েছেন অনেকে। তার এমন কর্মকাণ্ড লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ নামে। যদিও হারুনের ভাতের হোটেল নামটি আলোচনায় আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটক করে ডিবি অফিসে জোর করে ভাত খাওয়ানোর পর। সে সময় তিনি গয়েশ্বরকে জোর করে ভাত খাইয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন নিজেই। যদিও নানা সময় দেখা যায়, ইউটিউবার হিরো আলমসহ চলচ্চিত্র জগতের বিভিন্ন নায়ক, নায়িকাদের ডিবি অফিসে নিয়ে ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন হারুন অর রশিদ।
সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল ও তাদের বাসাবাড়ি থেকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে ডিবি অফিসে আটকে রাখেন। কয়েকদিন তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর খাবার টেবিলে বসিয়ে ছবি তুলে নিজের ফেসবুকে তুলে ধরেন। একইদিন রাতে হারুন সমন্বয়কদের একটি ছোফায় বসিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ভিডিও রেকর্ড করে গণমাধ্যমে পাঠান। এ ঘটনায় হাইকোর্ট ডিবি হারুনের ভাতের হোটেলের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ভাতের হোটেলের নামে জাতীয় তামাশা বন্ধেরও নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুলিশের ২০ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা। ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে সংসদ ভবন এলাকায় বেধড়ক পিটিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। নজর কেড়ে নেন সরকারের। গুরুত্বপূর্ণ পদক দিয়ে তাকে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হয়।
ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় বিকৃত সুরে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার অভিযোগে হিরো আলমকে আটক করেও বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। হিরো আলমকে আটকের ঘটনাটি সে সময় বিদেশি মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রচার হয়।