নেত্রকোনায় নদ-নদীর পানি বাড়ছেই, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে নেত্রকোনায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এত বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার দুর্গাপুর ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া এলাকার নেতাই নদীর পাড় ভেঙে উপদাখালী, সুমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েই চলেছে।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টের নাটেরকোনায় বাঁধ ভেঙে পানি ডুকছে লোকালয়ে। অপর দিকে কংস নদে পানি প্রবেশ করে বিপৎসীমার ০ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর তীরবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়ন এবং কলমাকান্দা, সদর ও পুর্বধলা উপজেলার বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উঠতি রোপা আমনের ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার কৃষকসহ জনসাধারণ। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার জারিয়া-জাঞ্জাইল পয়েন্টে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি ও দুর্গাপুরে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টির ফলে জেলার সোমেশ্বরী, উপদাখালি ও ধনু নদীর পানি বেড়ে চলেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখনও প্রধান নদীরগুলো পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কংশ নদের পানি পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কলমাকান্দায় উপদাখালী নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হচ্ছে নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চল। পানির তীব্র স্রোতে কিছু গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে। বেশ কিছু বাড়িঘর ধসে গেছে। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ও বারান্দায় পানি ঢুকে পড়েছে।
কলমাকান্দা উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। পাশাপাশি তলিয়ে গেছে শতাধিক পুকুর, আউশ ফসল, রোপা আমন ফসল, রবিশস্যসহ বীজতলা। অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের সঙ্গে চারটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলে,পাহাড়ি ঢলে রোপণ করা ধানের চারা ও সবজিসহ জমি তলিয়ে গেছে। তিন দিনের মধ্যে পানি কমে গেলে রোপা আমন ধানের ক্ষতি কম হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা.) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে উপজেলা প্রশাসন।
এদিকে দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দির সংখ্যাই বাড়ছে। ইতোমধ্যে উপজেলাটিতে ৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মোট ৭২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে নেত্রকোনা জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার পর থেকে আজ রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার জারিয়াজানজাইল নামক স্টেশনে ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টায় (৩ দিনে) এই স্টেশনে ৭৫৮ (২০০ + ২৫০ + ৩০৮) মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের অভ্যন্তরে তিন দিনে ৭৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত সম্ভবত আর কোনো জেলায় হয়নি।
এদিকে দুর্গতদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।