ভারতীয় হাইকমিশনে বিএনপির তিন সংগঠনের দেওয়া স্মারকলিপিতে যা আছে
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপির প্রদান করেছে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন।
আজ রোববার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ১টার দিকে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল বারিধারার ভারতীয় হাইকমিশনের সিকিউরিটি অফিসার ও কাউন্সিলর নারপাত সিংয়ের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ সময় ভারতীয় হাই কমিশনের ডিফেন্স এট্যাসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনমেত সিং সাবারওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির ।
স্মারকলিপিতে যা আছে
এইচ ই প্রণয় ভার্মা,
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা
প্লট নং ১-৩, পার্ক রোড, বারিধারা, ঢাকা ১২১২ ঢাকা, বাংলাদেশ।
বিষয় : সাম্প্রতিক অবন্ধুসুলভ ঘটনাবলী নিয়ে গভীর উদ্বেগ
এক্সিলেন্সি, আমরা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এই মর্মে গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করছি যে, দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর আপনার দেশের অতি উন্নবাদী নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনা ওয়াজেদকে পুনরায় পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করবার নিমিত্তে একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। যাতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সাথে, বাংলাদেশের জনগণের সাথে নয়। হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিরুদ্ধ হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদে আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।
এক্সিলেন্সি, আপনি সম্যক অবগত আছেন যে, গত ২ ডিসেম্বর ২০২৪-এ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। নৈতিক পদস্খলনের কারণে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত সাবেক ইসকন নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাজার হাজার মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় মদদ ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করছিল তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রাপ্ত বিবরণগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় না থাকতে দেখা গেছে। এটি কূটনৈতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এহেন ন্যাক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনাসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ। আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর। স্বার্বভৌম কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের সামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞা স্বরূপ বলে আমরা চাই ভারত সরকার ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলিকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার আদর্শ প্রচার করতে পরামর্শ দিবে।
আমরা আশা করি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশগুলোর মধ্যে একটি স্থিতিশীল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জাতিসংঘের সনদের নীতির উপর ভিত্তি করে 'সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনাকে অবগত করছি এবং অনুরোধ জানাচ্ছি যে, জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান ও মতামত ভারতীয় সরকারের নিকট পৌঁছে দেয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।