বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, পতাকা অবমাননা, ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান তথ্য সন্ত্রাস এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার দাবিতে ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির তিন সংগঠন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এক কর্মসূচি ঘোষণা করেন যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না। তিনি জানান, আগামী ১১ ডিসেম্বর নয়াপল্টন থেকে সকাল ৮টায় লংমার্চ শুরু হবে। দেশের সর্বস্তরের ছাত্র, যুবক ও স্বেচ্ছাসেবী জনতাকে এই লংমার্চে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

যুবদল সভাপতি বলেন, গত ২ ডিসেম্বর (সোমবার) ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভারতের হিন্দু সংগ্রাম সমিতির একদল উচ্ছৃঙ্খল সদস্য সহিংস হামলা করেছে। তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছে, মিশনের সম্পদ বিনষ্ট করেছে। সহিংস ঘটনার সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরব ভূমিকায় ছিল, যা উক্ত ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের মৌনসম্মতিকে ইঙ্গিত করে। ভারত সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী কূটনীতিকদের সুরক্ষা দিতে। এছাড়াও  বিগত ২৮ নভেম্বরে কলকাতায়ও একই ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

মোনায়েম মুন্না আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল মনে করছি, বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে সহিংস হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের শামিল।

মুন্না বলেন, ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর কথা বলে একদিকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অবমাননা করেছেন এবং অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

যুবদল সভাপতি বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগামহীন প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।  গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত ছাত্র জনতার সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশে তারা ক্রমাগত ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত খবর প্রচার করছে। তাদের অপপ্রচার ও গুজবের কারণে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা একইসাথে ভারতের সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।

মান্না বলেন, ভারত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনকে মেনে নিতে পারছে না। শেখ হাসিনার নির্দেশে দুই হাজারেরও বেশি ছাত্র জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে রিয়া গোপ, হৃদয় তরুয়া, রুদ্র সেন, দীপ্ত দে, শুভ শীল, তনয় দাস সহ আরও অনেক বীর শহীদ। ভারত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আরও অনেক ব্যক্তি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত এখন বাংলাদেশী ক্রিমিনালদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

মুন্না বলেন, বহিষ্কৃত ইসকন নেতা, বাংলাদেশের নাগরিক চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার, তদন্ত ও বিচার সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত মন্তব্য করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। চিন্ময় দাসের অনুসারীদের হাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য এবং সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ খুন হওয়ার পরেও বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ গভীর সংযম দেখিয়েছে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন। অন্যদিকে, ভারত একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রবণ রাষ্ট্র। ভারত তার নিজের দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ। সুতরাং, ভারতের কোনো নৈতিক অধিকার নেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার।