মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস আজ
শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শনসহ নানা আয়োজনে আজ কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। সকালে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলন শেষে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। এরপর জেলার মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়াও শহীদদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের এইদিনে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার কুষ্টিয়া জেলা শত্রুমুক্ত হয়। ২৫ মার্চ কালো রাতে মেজর শোয়েবের অধিনায়কত্বে এবং ক্যাপ্টেন শাকিল, ক্যাপ্টেন সামাদ ও লে. আতাউল্লাহর উপ-অধিনায়কত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্ট এ কোম্পানির ২১৬ জন সদস্য যশোর সেনানিবাস থেকে কুষ্টিয়ায় এসে কয়েকখন্ডে বিভক্ত হয়ে পুলিশ লাইন, জিলা স্কুল, টেলিগ্রাফ অফিস, সদর থানা ও আড়ুয়াপাড়া ওয়ারলেস অফিসে অবস্থান নেন। তারা দুএকটি ছাড়া শহরের সকল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ২৬ মার্চ শহরে একনাগাড়ে ৩০ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে ও সশস্ত্র টহল দিতে থাকে। তবে কুষ্টিয়ার মানুষ কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং সেনা চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এ সময় রনি রহমানসহ বেশ কয়েকজন পাকসেনার গুলিতে প্রাণ হারান। কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধে রনি রহমান প্রথম শহীদ। এরপর দীর্ঘ ৯ মাসে কুষ্টিয়ায় ছোট বড় অনেকগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ডিসেম্বর থেকে পাকসেনা খেদাও স্লোগানে মুক্তিযোদ্ধা সেনা ঘাঁটিগুলোয় আক্রমণ শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ থেকে ট্যাংক বহর নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করেই পাকিস্তানি বাহিনীর অ্যামবুশের মুখে পড়লে শুরু হয় যুদ্ধ। আর এটাই ছিল হানাদার বাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনীর সম্মুখ ট্যাংক যুদ্ধ। এখানে নির্মম মৃত্যু ঘটে ২ শতাধিক মিত্র সৈনিকের। শুরু হয় মিত্র বাহিনীর বিমান হামলা। বিধ্বস্ত হয় পাক হানাদারদের দুর্গ। এ লড়াইয়ে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধাসহ জেলার সাধারণ মানুষ। তোপের মুখে ১১ ডিসেম্বর প্রত্যুষে পালিয়ে যায় পাকবাহিনী। মুক্ত হয় কুষ্টিয়া।
চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ৫ দিন আগেই এ জেলার জনগণ বিজয় নিশানা দেখতে পেয়েছিল। স্বজনের গলিত লাশ, কঙ্কাল, গণকবর আর সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ ভুলে সেদিন বিজয়ের আনন্দে রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছিল মানুষ।