লাখপতির গল্প
আমার নামের সঙ্গে পেঁপের লাড্ডু জুড়ে যাক : তানজিনা
অনলাইন পেজের মাধ্যমে হোমমেড খাবার নিয়ে কাজ করে লাখপতি বনে গেছেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা তানজিনা আফরোজ।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় তানজিনা আফরোজের। সেখানে নিজের উদ্যোক্তা-জীবন নিয়ে কথা বলেন তিনি। জানান, তাঁর হোমমেড খাবার এরই মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
কুশল জানতে চাইলে তানজিনা আফরোজ বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আমি খাবার নিয়ে কাজ করি আর নিজ হাতে তৈরি করি; তাই একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে।’
তানজিনা জানালেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম তানজিনা’স কুকারি অ্যান্ড কেকারি। ঢাকার খিলগাঁও এলাকা থেকে কাজ করছেন। প্রায় এক বছর হতে চলল তাঁর উদ্যোগের। এখন বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন। তাঁর এমনও গ্রাহক আছেন, যিনি ১১ বার তাঁর কাছ থেকে খাবার নিয়েছেন। এটাকে তিনি সার্থকতা মনে করেন। এ ছাড়া রাজধানীর বনশ্রীতে তাঁর একটা ইতালীয় ও চাইনিজ ফুড বেসড রেস্টুরেন্ট আছে, যার নাম বেভান্দা ভেনেজিয়ানা রুফটপ—যেটা করোনার আগে খিলগাঁওয়ে ছিল, কিন্তু করোনার সময় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এখন অবশ্য আবার চালু করেছেন।
এনটিভি অনলাইনকে তানজিনা আফরোজ বলেন, ‘নিজেকে উদ্যোক্তা বলতে পারা যে কত বড় গর্বের বিষয়, এখন বুঝতে পারি। আমার উদ্যোগ শুরু করার প্রধান কারণই ছিলেন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) উপদেষ্টা ও সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার। উই এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি নিজেকে পরিচিত করতে পারেন। নিজের প্রতিভা দেখাতে পারেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। শূন্য থেকে কীভাবে শুরু করতে হয়, উই তা খুব ভালো করে শিক্ষা দেয়। উই-এ যখন হাজার হাজার নারীর সফলতার গল্প শোনা হয়, তখন সাহস পাওয়া যায় কিছু করার। আর উই-এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু তো সব নারীর রোল মডেল।’
কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তানজিনা বলেন, ‘আমি আমার অনলাইন পেজের মাধ্যমে হোমমেড খাবার নিয়ে কাজ করছি। থাই, চাইনিজ, ইতালিয়ান, দেশি রান্না খাবার; এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার ফ্রোজেন খাবার, রেডিমিক্স মসলা (বিরিয়ানি, তেহারি, রোস্ট, কাবাব), ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি। বেকারি আইটেমে পার্টি কেক, থিম কেক, ব্রেড,বান ইত্যাদি। তবে আমার সিগনেচার আইটেম হলো পেঁপের লাড্ডু ও দইবড়া। পেঁপের লাড্ডু আমি সম্পূর্ণ আমার রেসিপিতেই করি। আমি চাই একদিন এই পেঁপের লাড্ডুর নাম আমার নামের সঙ্গে জুড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, উই-এর মাধ্যমে লাখ টাকার ওপর সেল হয়েছে।’
আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন রয়েছে তানজিনার। ঈদে ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই ও রেডিমিক্স মসলা তো থাকছেই। এ ছাড়া রমজানজুড়ে ইফতারের আয়োজন থাকছে এবং শবে বরাত উপলক্ষে থাকছে হালুয়ার সম্ভার।
তানজিনা আফরোজ ইতালি থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করা শেফ। তাঁর উদ্যোক্তা-জীবন প্রায় এক বছরের। হোমমেড খাবারের পেজ দেখাশোনা করেন। তবে তাঁর রেস্টুরেন্টে আট জন স্টাফ আছে। তাঁর স্বামী রেস্তোরাঁ দেখভাল করেন। তানজিনা বলেন, ‘আমি প্রফেশনাল শেফ। আমি খাবারের গুণগত মান বজায় রেখে খাবার তৈরি করি এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করি। আমার স্লোগান হলো—Eat Healthy Live Wealthy।’
বলা হয়, অনেকে লাখপতি? তানজিনা হতে পেরেছেন? বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমিও লাখপতির খাতায় নাম লিখিয়েছি। কারণ, শুধু উই-এ আমার লাখ টাকার ওপর সেল হয়েছে। নিজের কাজের প্রতি সবাইকে অনেক বেশি দায়িত্ববান হতে হবে। তাহলে লাখপতি হওয়া সহজ হবে।’
তানজিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমার তানজিনা’স কুকারি ও কেকারি-এর ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই ও মসলা আমি চাই বিদেশে রপ্তানি করতে। আমাকে সবাই আমার সিগনেচার আইটেম পেঁপের লাড্ডুর নামে চিনবে বা বলতে পারেন পেঁপের লাড্ডুকে আমার নামে চিনবে। এ ছাড়া আমার রেস্টুরেন্ট বেভান্দা ভেনেজিয়ানার শাখা থাকবে দেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে কক্সবাজারে আমার রেস্টুরেন্টের একটা শাখা থাকবে, এটা আমার স্বপ্ন।’
তানজিনার সেই স্বপ্ন পূরণ হোক আর তাঁকে দেখে আরও নারী উদ্যোক্তা-জীবন শুরু করুন, এ প্রত্যাশা অনেকের।