লাখপতির গল্প
মণিপুরী লুঙ্গি-গামছা বেচে লাখপতি শান্তা
২০২০ সালের ২৮ আগস্ট অনলাইনে পোশাক বেচা শুরু করেন মুসলেমা পারভীন শান্তা। মাত্র এক বছরে এখন তাঁর ব্যবসা বেশ ভালো। শান্তার অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—ব্লসম ক্লোসেট।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় মুসলেমা পারভীন শান্তার। জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। শুরুর গল্প শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার মতো জায়গায় একটি রক্ষণশীল পরিবারে আমার জন্ম। যখন থেকে বুঝতে শুরু করেছি, তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল নিজে কিছু একটা করব। আমার পরিবারের প্রায় সবাই ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসার প্রতি একটা আলাদা টান ছিল ছোটবেলা থেকেই। উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) গ্রুপে এসে ২০২০ সালে সেই আগ্রহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর সেই থেকেই আমার উদ্যোগের জন্ম।’
শান্তা বলেন, ‘প্রথম দিকে আমি দেশীয় থ্রি-পিস নিয়ে উদ্যোগ শুরু করলেও পরে আমার উদ্যোগে যোগ হয় দেশীয় শাল, জুটব্যাগ, গামছা, লুঙ্গি, থামি ওড়না ও শাড়ি। মণিপুরী গামছা নিয়ে আমি অনেক বেশি সাড়া পাই। তাই এই গামছাকেই আমার ফোকাস পণ্য হিসেবে রাখি এবং মজার বিষয় হচ্ছে, আমার উদ্যোগের মাধ্যমে অনেকে মণিপুরী লুঙ্গির সাথে পরিচিত হচ্ছে। এর আগে অনেকে জানত না মণিপুরী লুঙ্গি সম্পর্কে।’
উদ্যোক্তা হয়ে কেমন লাগছে? মুসলেমা পারভীন শান্তা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, অনেক বেশি ভালো লাগছে। কখনও ভাবতে পারিনি নিজেকে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পারব। কিন্তু এখন নিজের সম্পূর্ণ আলাদা করে একটা পরিচয় দাঁড় করাতে পেরেছি। হাজার হাজার না হলেও গুটিকয়েক মানুষ এখন আমাকে চেনে; আমাকে ও আমার উদ্যোগ সম্পর্কে জানছে। কাজের ক্ষেত্রে বলতে গেলে আমি নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা ছিলাম। কারণ, সে সময় তেমন কারও কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাইনি। তবে উই-জননী নাসিমা আক্তার নিশা আপুকে খুব ফলো করতাম। উনার নারীদের নিয়ে প্রতিটা কাজই আমাকে খুব বেশি উৎসাহ দিত। আর উই গ্রুপের অন্য নারীদের কাজ দেখেও প্রভাবিত হয়েছি, যাদের সে সময়টাতে ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে উদ্যোগে সফল হতে দেখেছি।’
এ পর্যন্ত দুই লাখ ৭০ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছেন মুসলেমা পারভীন শান্তা। উই-এর ফেসবুক গ্রুপ শান্তার উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা-জীবনের পুরোটাই বলতে গেলে উই গ্রুপের অবদান। উই থেকেই আমার উদ্যোগের জন্ম। তাই উই নিয়ে বলতে গেলে ছোট্ট করে আমার জার্নিটা শেয়ার করতে হবে। আমি উই-এ যোগ দিই ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তখন একদমই অ্যাকটিভ ছিলাম না। কিন্তু প্যান্ডেমিক টাইমে সারা পৃথিবী যখন স্থবির হয়ে পড়ে, তখন আমার অফিসও বন্ধ হয়ে গেল। সে সময় আমার হাতে প্রচুর সময়। তখনই উই-এ অ্যাকটিভ হওয়া শুরু করি। অনেকের মতো আমারও ধারণা ছিল ফেসবুক শুধু আড্ডা আর মজার জায়গা। কিন্তু উই-এ এসে আমার সেই ভুল ভেঙেছে। উই-এ দেখতাম সব উদ্যোক্তা সুন্দর সুন্দর পোস্ট দিচ্ছে। তিন মাস অ্যাকটিভ থাকার পর সবার দেখাদেখি আমিও পোস্ট দেওয়া শুরু করলাম। উই-এ সময় দিয়েই আমি নিজের পেজ তৈরি করতে শিখলাম, শিখলাম কীভাবে একটা পেজ সাজাতে হয়, আরও শিখলাম কীভাবে ফেসবুক পেজ আর গ্রুপকে কাজে লাগিয়ে একটা উদ্যোগ সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায়। তার পর সাহস করে ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করে দিলাম আমার উদ্যোগ।’
শান্তা জানান, প্রোডাক্ট সোর্সিং থেকে শুরু করে এর ফটোগ্রাফি, প্যাকেজিং, ডেলিভারি, পার্সেল হস্তান্তরসহ যাবতীয় কাজ তিনি একাই সামলান। তাঁর পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডা ও ফিনল্যান্ড পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছে। ভবিষ্যতে এভাবে নিজের উদ্যোগকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে চান এ উদ্যোক্তা।