বিজনেস আইকন
কর্মীকে স্বপ্নের বাইরে যেতে সাহায্য করেছি : সাইফুল ইসলাম
‘ছোটকাল থেকেই আমার ভীষণ আত্মবিশ্বাস ছিল। প্রথমদিকে দেশের উন্নতি কথা পত্রিকায় লেখালেখি করেছি। পরে উপলব্ধি করলাম সেটাতে লাভ নেই। বেশি দরকার ছিল কর্মসংস্থানের সুযোগ করা। আশির দশকে বাংলাদেশে তেমন কিছুই ছিল না। এর মধ্যে ব্যবসা কীভাবে কোথা থেকে আরম্ভ করব সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভাবলাম আমাদের তো একটা জিনিস আছে তা হচ্ছে পাট। পাটজাত পণ্য রপ্তানি দিয়েই ব্যবসার শুরু করি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশের কনকর্ড গার্মেন্টস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
urgentPhoto
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন বিজনেস আইকনের এবারের পর্বে তুলে ধরা হয়েছে এই স্বপ্নচারী মানুষটির গল্প। তিনি বলেছেন জীবনের সিঁড়িগুলো কীভাবে টপকে এসেছেন, সেই গল্প।
বাবা সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামছুল ইসলাম। ভালো ছাত্র ছিলেন। বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। তাই চাইলে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠানে অনেক ভালো চাকরি পেতেন খুব সহজেই। কিন্তু তিনি সে পথে যাননি। চার দশকেরও বেশি আগে নিজেকে নিয়ে অনেকটা বাজিই ধরেছিলেন তিনি। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসে জিতে গেছেন সেই যাত্রায়। তারপর যত এগিয়েছেন ততই বেড়েছে সফলতার গল্প। এখনো যেতে চান আরো অনেকটা পথ।
তাঁর জন্ম ও বেড়ে উঠা ঢাকাতেই। পড়াশোনার হাতে খড়িও হয়েছে এখানেই। তারপর একদিন উচ্চ শিক্ষা নিতে চলে যান আমেরিকায়।
আমেরিকা থেকে ফিরে আসেন একমুঠো স্বপ্ন হাতে ভরে। ব্যবসা করতে চান তিনি। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবেন তাই বুঝতে পারছিলেন না।
পরিবারের কেউ ব্যবসায়ী ছিলেন না। বাবা ছিলেন রাজনীতিবিদ। আর মা ঘরের মানুষ। তবে তাঁর দাদা ছিলেন ব্রিটিশ রাজের জমিদার ও নামকরা ব্যবসায়ী। একদিন সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে পাট থেকে তৈরি পণ্য বাইরে পাঠানো শুরু করলেন।
এর মধ্যেই একদিন চোখে পড়ে টাইম ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া এক নিবন্ধ। সেখান থেকেই চোখ-কান আরেকটু খুলে যায় তাঁর। বাবার সাথে কথা বলেন। তাঁর বাবা পরিচয় করিয়ে দেন এক ব্যাংকের কর্তা ব্যক্তির সাথে। তিনিও তাঁকে আশার কথা শোনান, সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ফলাফলে ঋণ পেতে তেমন একটা সমস্যা হয়নি তাঁর। তবে সেই সময়েই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাকে বলে তা ভালো ভাবেই বুঝে গিয়েছিলেন জমি বরাদ্দ নিতে গিয়ে।
দেশে যে হাতেগোনা কয়েকজনের হাত ধরে পোশাকশিল্পের প্রসার ঘটেছিল তিনি তাঁদের একজন। শুরুতে তো কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার পর নিজেই সেলাই করা শিখিয়েছেন। তবে শুরু থেকেই মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় ছিল না। ক্রেতাদের সন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে তারপর ব্যবসার চিন্তা করতেন, এখনো তাই করেন।
তৈরি পোশাকের ব্যবসা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই প্রশিক্ষণ নিতে যান সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে ফিরে নিজেরাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে বসেন। সেও এক মজার গল্প।
এই সময়ের তরুণদের যাঁরা ব্যবসায় আসতে চান, তাঁদের জন্য তাঁর পরামর্শ আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যাওয়ার। আর মানুষকে ঠকানোর চিন্তা কোনোভাবেই মাথায় আনা যাবে না। তাহলে সাফল্য মিলবেই।
এখন তৈরি পোশাক খাতেই তাঁর তিনটি আলাদা আলাদা ইউনিটে কাজ চলে। সেগুলোক পরিবেশবান্ধন রাখার চেষ্টা করেছেন। এই খাতে বিশ্বের যত ভালো ভালো পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, তারাও তাদের আশপাশেই থাকবে বলে বিশ্বাস করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতা আছে আরো বেশি।
সাথে সাথে সময়ের প্রয়োজনেই নতুন নতুন ব্যবসাও শুরু করেছেন। এসএমএস ব্যাংকিং, অনলাইনে পণ্য কেনা- এমন কিছু বিষয় তাঁরাই প্রথম বাংলাদেশে শুরু করেছেন।
তাঁর সাথে যারা কাজ করেন, সবাইকে সহকর্মী ভাবেন। তাঁদের নিয়ে আরো অনেকদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে যুক্তরাজ্যের সাথে কাজ করছেন। গ্রামে বিদ্যালয় তৈরি করে দিয়েছেন। আসলে তাঁর শুরুটাই তো ছিল মানুষের জন্য কিছু করার চিন্তায়, তাই সেই চেষ্টাটা তাঁর সবসময়ই আছে।
সাইফুল ইসলাম নামে নয় কাজে বিশ্বাসী। তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও সেই প্রেরণাটা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাই তাঁর পথচলায় সবাই সহযাত্রীই হয়েছেন। বিনিময়ে তাঁদের দায়দায়িত্ব তিনি নিয়ে নিয়েছেন। যে স্বপ্ন নিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কেউ কাজ করতে আসেন, তিনি তাঁকে তারচেয়েও বেশি দিয়ে দেন। ফলাফলটাও হাতে হাতেই পান। আর তাদের নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন আরো, আরো অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার।
সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের তিনটা ডিভিশনে চার হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে। আমি তাদের দায়িত্ব নিয়ে থাকি। আমাদের এখানে বিভিন্ন ডিভিশনে হেড আছেন, তাঁরা সম্পর্ণরূপে স্বাধীন। ডিভিশনের সব ধরনের সিদ্ধান্ত তাঁরা নেন। আমার কাজ হচ্ছে এক ধরনের নেতৃত্ব দেওয়া। যারা এখানে আসে তারা এক্সট্রা অর্ডিনারি রেজাল্ট করে। তাদের আমরা পুরস্কৃত করি। তারা কোম্পানির খরচে বিদেশে যায় ছুটি কাটাতে। আমাদের প্রথম কর্মী, টি বয় ২৬ বছর কাজ করার পরে স্বাস্থ্যগত কারণে সে যখন চলে যায় তার বেতন ছিল ৯০ হাজার টাকা। তাকে একটু একটু দায়িত্ব দিয়ে তাকে যোগ্য করে তুলছি। টি বয় থেকে তার স্বপ্ন বাইরে যেতে সাহায্য করেছি।