সু চির জয়ে আশা বেড়েছে বহুজাতিক কোম্পানির
এশিয়ার অতিপরিচিত রাজনীতিক নোবেলজয়ী অং সান সু চি। মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জিতেছে তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)।
পরিবর্তনের স্বপ্নে বিভোর মিয়ানমারের জনগণ ২৫ বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে এনএলডিকে জিতিয়েছে। এতে জনপ্রিয় নেতা সু চির দায় বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনলাইনে ১১ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সু চির তারকা খ্যাতির চেয়ে মিয়ানমারে বিনিয়োগের পরিবেশ কতটা সৃষ্টি হবে সেদিকেই চেয়ে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে দেশটিতে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ঘোষিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া দেশের উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব নয়।
গত পাঁচ বছরে সামরিক জান্তা সরকারের আমলে দেশটিতে দুই ডিজিটে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আর অবকাঠামোর বেহাল দশার কারণে শ্রমমজুরি কম হওয়া সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগে বাধা থেকে গেছে।
গত মার্চ শেষ হওয়া অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল মিয়ানমার সরকার। তবে তার আগের অর্থবছরের একই সময় ৮০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল।
বহুজাতিক কোম্পানি কোকাকোলা, জেনারেল ইলেকট্রিক মিয়ানমারে ব্যবসা করছে। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে তারা তেমন কোনো মন্তব্য করে না। অনেক মার্কিন কোম্পানি মিয়ানমারে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। সূ চির জয় তাদেরকে আশা জাগিয়েছে।
মিয়ানমারে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে শেভরন, ক্যাটারপিলারসহ ১০০টির বেশি কোম্পানি যুক্ত রয়েছে। এ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জুডি বেন বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই নতুন সরকার ব্যবসার পথ খুলে দিক। ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান রাখুক।’
বাংলাদেশের মতো মিয়ানমারের বস্ত্র খাতের সম্ভাবনা ব্যাপক। দুই দেশের মজুরির পার্থক্যও কম। দিনে গড়ে ২২০ টাকা করে মজুরি পান একজন শ্রমিক। দেশটি ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে বিভিন্ন তৈরি পণ্য রপ্তানি করে থাকে।
মিয়ানমারের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি জানায়, দেশটির আড়াই লাখের বেশি মানুষ বস্ত্র খাতে কাজ করছে। তবে তা মোট কর্মক্ষম মানুষের ১ শতাংশ।
মিয়ানমারের তৈরি পোশাক খাতের কোম্পানি ম্যাপল ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অং উইন বলেন, চালান খরচ, বিদ্যুৎ ব্যয় ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ইয়াঙ্গুনের কাছে তাঁর কারখানায় কাজ করা ৭০০ কর্মীর মধ্যে ৫০০ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তবে সু চি ক্ষমতায় গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
সু চি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছিলেন, তাঁর দল দেশটির কৃষি, তৈরি পোশাক, চামড়াশিল্প, প্রাকৃতিক গ্যাস ও রপ্তানি খাতের বিকাশে কাজ করবে।
দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের ক্ষেত্রে এতদিন একটি বড় সমস্যা ছিল, তা হচ্ছে বিমান, জ্বালানি ও মূল্যবান পাথরের ব্যবসা সামরিক বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। এসব ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পথ সৃষ্টি করা কঠিন হতে পারে।
অং উইন মনে করেন, সু চির আন্তর্জাতিক খ্যাতি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কাজ করবে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে ‘মেড ইন মিয়ানমার’-এর মতো প্রকল্প চাইছে। এটি হলে গ্যাপ ও এইচঅ্যান্ডএমের মতো কোম্পানি বিনিয়োগে সাড়া দেবে বলে মনে করেন অং উইন।