পুরস্কার পেল সেরা ২০ ব্র্যান্ড
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম (বিএফএফ) ও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিলওয়ার্ড ব্রাউন, বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘সপ্তম সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার ২০১৫’ প্রদান করেছে। এবার সেরা ব্রান্ডের পুরস্কার পেয়েছে ২০টি ব্রান্ড। এর মধ্যে ১০টি আন্তর্জাতিক আর বাকি ১০টি স্থানীয়।
কনজ্যুমার সার্ভে বা ভোক্তাদের ওপর গবেষণা-জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে সাত বছর ধরে দেশের সেরা ব্র্যান্ডগুলোর স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার’ দেওয়া হয়।
দেশের করপোরেট খাতের শীর্ষ নির্বাহী, সুখ্যাতিসম্পন্ন ব্যবসায়ী ও বিপণন ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্ট কূটনীতিকরা বিজয়ী ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। গতকাল রোববার রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রায় ৬০০ ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং কর্মকর্তা, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইরি স্টারের সহযোগিতায় বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে ইভেন্ট পার্টনার হয়েছে হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনডিপেনডেন্ট হয়েছে টিভি পার্টনার, নলেজ পার্টনার হয়েছে এমএসবি, ওয়েবেবল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া পার্টনার, ম্যাভেরিক হয়েছে ডিজিটাল কনট্যান্ট পার্টনার, আইটি পার্টনার হয়েছে আমরা এবং মাস্টহেড হয়েছে পিআর পার্টনার। এ ছাড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে ২৩টি সিন্ডিকেট পার্টনার।
এ বছরেও সারা দেশে মিলওয়ার্ড ব্রাউন, বাংলাদেশের মাসব্যাপী পরিচালিত এক গবেষণা-জরিপের ভিত্তিতে ৩৫টি ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে দেশের সেরা ব্র্যান্ডগুলোকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরে এফএমসিজি (ফাস্ট-মুভিং কনজ্যুমার গুডস) থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস ও সেবাপণ্য শ্রেণিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবারেই অবশ্য নতুন পাঁচটি ক্যাটাগরি বা শ্রেণি যোগ হয়েছে। এজন্য শুধু রাজধানী ঢাকা শহরে একটি গবেষণা-জরিপ করা হয়েছে। বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড বা সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কারের জন্য নতুনভাবে যুক্ত হওয়া পাঁচ ক্যাটাগরি হচ্ছে ফ্যাশন-বুটিক, ফুড জয়েন্ট, এফএম রেডিও, সুপারস্টোর ও ফার্নিচার। ব্যক্তিগত পরিচর্যা ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে লাক্স, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি, ক্লোজআপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ফুড অ্যান্ড বেভারেজেস বা খাদ্য ও কোমলপানীয় ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে পুরস্কার পাওয়া সেরা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো হরলিকস্, সেভেন আপ ও ম্যাগী। ফুড জয়েন্ট ক্যাটাগরিতে বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০১৫ পেয়েছে কেএফসি। সেই সঙ্গে সুপারশপ ক্যাটাগরিতে আগোরা, ফ্যাশন-বুটিক ক্যাটাগরিতে আড়ং, প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দৈনিক প্রথম আলো, ফার্নিচার বা আসবাব ক্যাটাগরিতে অটবি এবং এফএম রেডিও ক্যাটাগরিতে রেডিও ফুর্তি সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে।
প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে সেরা ব্র্যান্ড ছাড়াও সার্বিকভাবে ১০টি শীর্ষ ব্র্যান্ড এবং স্থানীয় ১০টি শীর্ষ ব্র্যান্ডকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। চলতি ২০১৫ সালে বাজারে আসা সেরা ব্র্যান্ডের পুরস্কার পেয়েছে স্যামসাং। মোস্ট ইমপ্রুভড ব্র্যান্ড হিসেবে সর্বাধিক উন্নতি করা কোম্পানির পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বাংলালিংককে। মোস্ট কনসিসট্যান্ট ব্র্যান্ড ২০১৫ সালের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্র্যান্ড হিসেবে পুরস্কার জিতেছে লাক্স। মোস্ট ইমপ্রুভড ক্যাটাগরি পুরস্কার পেয়েছে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে বিশেষ সম্মাননার নিদর্শনস্বরূপ একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। প্রকাশনাটিতে প্রত্যেক ক্যাটাগরির শীর্ষ তিনটি ব্র্যান্ডের নেপথ্য কাহিনী বা সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
মিলওয়ার্ড ব্রাউন সম্পর্কে
১৯৭৩ সাল থেকেই মিলওয়ার্ড ব্রাউন বিশ্ব্যাপী ব্র্যান্ড ট্র্র্যাকিংয়ে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি ব্র্যান্ড ট্র্যাকিং গবেষণা পরিচালনা করেছে এবং ব্যাপকভিত্তিক ডাটাবেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ড ট্র্যাকিং সংক্রান্ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে ৬টি মহাদেশের ৫২টি দেশে এখন মিলওয়ার্ড ব্রাউনের এক হাজার ৮০০টি ধারাবাহিক ট্র্যাকিং গবেষণা চলছে।
সেরা ব্র্যান্ড নির্বাচন পদ্ধতি
বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম (বিবিএফ) ও মিলওয়ার্ড ব্রাউনের ‘বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ শীর্ষক এই সেরা ব্র্যান্ড পুরস্কার দেওয়ার জন্য যে গবেষণা-জরিপ করা হয়েছে তাতে সম্পূর্ণভাবে সংখ্যাত্মক ও পরিমাণগত বিষয়ই ছিল মূল বিবেচ্য। র্যানডম স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে উত্তরদাতা নির্বাচিত করে সরাসরি তাঁদের হাতে অত্যন্ত সুবিন্যস্ত প্রশ্নমালা দিয়ে হাতে কলমে উত্তর নেওয়া হয়েছে।
সেরা ব্র্যান্ড নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ায় মিলওয়ার্ড ব্রাউনের এমডিএস (মিনিংফুল, ডিফরেন্ট, স্যালিয়েন্ট বা অর্থপূর্ণ, ব্যতিক্রমী ও লক্ষণীয়) ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে। এই কাঠামোর সারবস্তু হলো যেই ব্র্যান্ড যতটা অর্থপূর্ণ, ব্যতিক্রমী ও লক্ষণীয় হবে সেটি ব্যবহারের প্রতি গ্রাহকদের ততবেশি ঝোঁক বা আগ্রহ বাড়বে। কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের জন্য আদর্শ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা হলো ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তির আলোকে পণ্যের দাম ও বিক্রয় লক্ষ্য নির্ধারণ, যা মুনাফা নিশ্চিত করে। দেশব্যাপী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি অর্থাৎ একই ক্যাটাগরির অন্য পণ্য কিংবা অন্যান্য ক্যাটাগরির পণ্যগুলোর সঙ্গে একটি পণ্যের মিল-অমিল এবং তূলনামূলক সুবিধার পার্থক্য নির্ধারণের নিরীখে মিলওয়ার্ড ব্রাউন শীর্ষ বা সেরা ব্র্যান্ড নির্বাচনের র্যাঙ্কিং বা তালিকা তৈরি করেছে।