রিজার্ভের অর্থ শ্রীলঙ্কায় যায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নামে!
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থের একটি অংশ শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিল পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নামে। শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ যাচ্ছিল। তবে দুই কোটি মার্কিন ডলার ছাড় হওয়ার আগেই ধরা পড়ে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, অর্থপাচার বিশ্বাসযোগ্য করতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম জড়ানো হয়েছে।
এদিকে শালিকা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার হাগোদা গোমেজ শালিকা পেরেরা (৩৬) অর্থ চুরির সঙ্গে তাঁকে জড়ানোর জন্য এক বন্ধু ও তাঁর প্রতিষ্ঠানেরই এক ব্যবস্থাপককে দায়ী করেছেন।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে রয়টার্সের কাছে সাক্ষাৎকার দেন শালিকা পেরেরা। তিনি দাবি করেন, কোনো অবৈধ কাজের সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। তাঁর বন্ধু অর্থ চোরদের শিকার অথবা এর সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করেন শালিকা পেরেরা।
সাক্ষাৎকারের সময় শালিকা পেরেরা তাঁর প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে অর্থ যাওয়ার একটি সুইফট মেসেজ দেখান। এতে দেখা যায়, তাঁর প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে দুই কোটি মার্কিন ডলার যাওয়ার কথা। আর অর্থ পাঠানোর প্রতিষ্ঠান হিসেবে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নাম। ২০১০ সালের পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড একটি প্রকল্পে জন্য জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার কাছ থেকে ঋণ নেয়।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দিন বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে অর্থ পাঠানো হয়েছে বিষয়টি চিন্তাও হাস্যকর।’
শালিকা পেরেরা রয়টার্সকে বলেন, জাপানের উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে তিনি দুই কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা আশা করছিলেন। তাঁর এক বন্ধু জাইকার সহায়তার জন্য বিভিন্ন নথি তৈরি করে নেন এবং যথাসময়ে সহায়তা যাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তাই ব্যাংককেও বিষয়টি জানিয়ে রেখেছিলেন পেরেরা।
এদিকে পেরেরার বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার কলম্বোর আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, পেরেরার বন্ধু দাবি করেছেন, জাপানি এক ব্যক্তি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ওই অর্থ পেতে সহায়তা করেছেন।
পুলিশ প্রতিবেদন থেকে পেরেরার বন্ধু ও জাপানি মধ্যস্থতাকারীর নাম নিয়েও অবস্থান জানতে পারেনি রয়টার্স। তবে ফোনে ওই জাপানি নাগরিক বলেন, তিনি ভ্রমণে গেছেন। অর্থ লেনদেনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করবেন না।
শ্রীলঙ্কার আদালত এরই মধ্যে শালিকা পেরেরা, তাঁর স্বামী, বন্ধুসহ প্রতিষ্ঠানের ছয় পরিচালককে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দুই কোটিই যায় শালিকা ফাউন্ডেশনের নামে। প্রতিষ্ঠানের নামের বানান জটিলতায় আটকে দেওয়া হয় ওই অর্থ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, শালিকা ফাউন্ডেশন লেখার সময় ‘ফাউন্ডেশন’ বানানটি ভুল ছিল। মধ্যবর্তী একটি ব্যাংক তাদের কাছে নামের বানান নিশ্চিত হতে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে জাইকার মুখপাত্র নাওউকি নেমাটো বলেন, শালিকা ফাউন্ডেশনের সহায়তার বিষয়ে কোনো নথি তাঁদের কাছে যায়নি।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা) চুরি হয়। এর মধ্যে আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবেশ করে। এই অর্থছাড় হয় আরসিবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোর হাত দিয়ে। এ ঘটনায় ফিলিপাইনের সিনেটে মায়া সান্তোস দেগুইতো ও ফিলিপাইনের ব্যবসায়ী কিম ওংয়ের শুনানি চলছে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে যাওয়ার কথা ছিল। তবে নাম জটিলতায় লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে।