তিন উৎসবে রঙিন এনআরবিসি ব্যাংক
এনআরবিসি ব্যাংক নিজেদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ১২ বছরে পদার্পন, বাংলা নববর্ষ বরণ এবং ঈদ পুনর্মিলনী বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপন করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) এই তিন উৎসব উপলক্ষে প্রধান কার্যালয়ের সব বিভাগ এবং সারাদেশের শাখা—উপশাখায় মতবিনিময় সভা ও ‘ওয়ান ডিশ পার্টি’র আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। হাইব্রিড পদ্ধতিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, পরিচালক ওলিউর রহমান, এ এম সাইদুর রহমান, লকিয়ত উল্লাহ, মোহাম্মদ নাজিম, স্বতন্ত্র পরিচালক, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এয়ার চিফ মার্শাল (অব:) আবু এসরার, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. খান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, ড. রাদ মজিব লালন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী গোলাম আউলিয়াসহ ব্যাংকের উদ্যোক্তা এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিজেদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাড়াও বাংলা পঞ্জিকার ১৪৩১ বর্ষকে বরণ এবং পবিত্র ঈদুল ফিতর শেষে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘ওয়ান ডিশ পার্টিতে’ ব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তা—কর্মচারী নিজেদের পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে এসে সহকর্মীদের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেন। অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের গড়ে তোলা অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। সমগ্র জাতি উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ এবং বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছে। এনআরবিসি ব্যাংক আজ ১২ বছর পদার্পণ করেছে। এ উপলক্ষে ব্যাংকের কর্মকর্তা—কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। এনআরবিসি ব্যাংক গ্রামের উন্নয়নে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা বিশ্বাস করি এনআরবিসি ব্যাংকের জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড সরকারের দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যকে সহজ করবে।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল বলেন, ‘এনআরবিসি ব্যাংক মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। একেবারে পিছিয়ে থাকা মানুষটিকে এগিয়ে নিতে আমরা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। আমরা সরকারের গ্রামকে শহরায়ন কর্মসূচির আলোকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। আজ আমরা বাংলা নববর্ষ, ঈদপুনর্মিলনী ও ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এই তিন উৎসব এক সঙ্গে উদযাপন করছি। এনআরবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে উৎসবের মত রঙিন করতে চায় গ্রামবাংলার প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রাকে।’
ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজু বলেন, ‘বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ১১ বছর পার করে ১২ বছরেই বিভিন্ন আর্থিক সূচকে শীর্ষে উঠে এসে নতুন নতুন মাইলফলক স্থাপন করছে এনআরবিসি ব্যাংক। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন ও শাখা উপশাখা সম্প্রসারণে সবার শীর্ষে এনআরবিসি ব্যাংক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে এনআরবিসি ব্যাংক। ব্যাংকটি গ্রামের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।’
ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব উদ্ভাবন ছিল উপশাখা ব্যাংকিং। উপশাখার মাধ্যমে আমরা প্রান্তিক গ্রাম র্পন্ত ব্যাংকিং সেবা নিয়ে যেতে পেরেছি। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিনাজামানতে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার মানুষ এনআরবিসি ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেছেন। এনআরবিসি ব্যাংক গ্রামবাংলার গণমানুষের ব্যাংক। যেখানে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব আমরা সেখানে বিনিয়োগ করছি। ব্যাংকিং সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমরা রিয়েলটাইম ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ফিনটেকের উপর জোর দিয়েছি। আমাদের মূল লক্ষ্য প্রতিবছর ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল ৫৩ জন প্রবাসী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় এনআরবিসি ব্যাংক। বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় ওই বছরের ১৮ এপ্রিল। আলোচ্য সময় ব্যাংকের আর্থিক সূচকগুলো অনেক শক্তিশালী হয়েছে। ২০১৭ সালে আমানত ছিল ৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে তা প্রায় চার গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা। এভাবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০১৭ সালে ঋণ ছিল ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, আর ২০২৩ সাল শেষে হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। ব্যাংকের কর্মীর সংখ্যা ৬১৭ জন থেকে ছয় গুণ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৩২ জন। ২০১৭ সালে শাখার সংখ্যা ছিল মাত্র ৬১টি। ২০২৩ সাল শেষে শাখা—উপশাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০০টি।