এবার আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে রাবি উপাচার্যকে হুমকির অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজি না হওয়ায় উপাচার্যকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দপ্তরে এ ঘটনা ঘটে।
গত বুধবার অনিয়মের দায়ে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে জরিমানার করায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী উপাচার্য মিজানউদ্দিনকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সংসদ সদস্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার একদিন পরেই আজকের এ ঘটনা ঘটল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন তাঁর দপ্তরে বসে কাজ করছিলেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ছিলেন। হঠাৎ করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে উপাচার্যের দপ্তরে প্রবেশ করেন। এ সময় ডাবলু সরকারের সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ শাহাদত হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার।
এ সময় ডাবলু সরকার উপাচার্যকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনি আপনার প্রোটোকল মেইনটেইন করবেন, নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেবেন?’ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে সবকিছু করার কথা জানালে ডাবলু আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ও তাঁর সহযোগীরা উপাচার্যকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন মাতিন, বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক ডাবলু সরকার ও অন্যান্য উত্তেজিত নেতাদের শান্ত করার চেষ্টা করলে তাঁরা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন।
ডাবলু সরকার বলতে থাকেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলছেন না, তাঁদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এর আগে বুধবার সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। আমার এবং মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে নিয়োগ প্রার্থীদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) তালিকা আছে, সেই অনুযায়ী অতিসত্বর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে দেব না।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান উপাচার্য থাকাকালীন দলীয় বিবেচনায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যান। এখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোকবল থাকায় বর্তমান প্রশাসন তাঁদের মেয়াদের দুই বছর পার করলেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ডাবলু সরকার।
এ বিষয়ে ডাবলু সরকার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের হাতে নিহত ছাত্রলীগ নেতা ফারুকের বোনের চাকরি স্থায়ীকরণ, আহত ছাত্রলীগ নেতা মাসুদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থাসহ কয়েকটি দাবি-দাওয়া নিয়ে আমরা উপাচার্যের দপ্তরে গিয়েছিলাম। উপাচার্য এ সময় বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তিনি বাইরের কারো সাথে কথা বলতে পারবেন না। এ সময় আমাদের নেতাকর্মীরা চলে আসতে চাইলে এক শিক্ষক মহানগর আওয়ামী লীগের এক সহ-সভাপতির হাত ধরে টান দেন। তখন নেতাকর্মীরা কিছুটা ক্ষুব্ধ হলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’
তবে উপাচার্যকে গালিগালাজ, হুমকি কিংবা লাঞ্ছিত করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ডাবলু সরকার।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডাবলু সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা দপ্তরে এসে যেভাবে অশালীন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে গেছেন, তাতে আমি চরম অপমানিত বোধ করেছি, যা মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও একজন জনপ্রতিনিধি (ওমর ফারুক চৌধুরী) বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পদোন্নতির মনোনয়ন বোর্ড চলাকালীন আমার টেবিল চাপড়ে যেভাবে অশালীন ভাষায় গালাগাল করে গেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’