জাবিতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, কর্মসূচি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগের মারধরের ঘটনায় দুই পক্ষ আজ সোমবার প্রশাসনের কাছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে পৃথক কর্মসূচিও পালন করেছে দুই পক্ষ।
গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেলের বান্ধবী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ছয় ছাত্রকে রাজীব ও তাঁর অনুসারীরা বেধরক পেটান। এতে গুরুতর আহত হয়ে একজন সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেলের বিচার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে মানববন্ধন করে। অন্যদিকে উত্ত্যক্তকারীদের বিচারের দাবিতে একই ব্যানারে আরেক দল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে মারধরের ওই ঘটনায় আহত ছয় শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছেন। একই ঘটনাকে উত্ত্যক্ত দাবি করে তাদের দ্রুত বিচারের দাবিতে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী।
অভিযোগকারীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফিরোজ মাহমুদ (দর্শন বিভাগ), এ এস এম শফি কামাল (বাংলা বিভাগ), নিয়াজ মোরশেদ অনিক (ইতিহাস বিভাগ), জামিনুর রহমান (নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ), রাকিবুর হাসান বাঁধন (নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ) ও আসাদুজ্জামান পলাশ (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ)।
লিখিত অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ‘শনিবার রাতে আমরা বিপ্লবের (বন্ধু) পেটের পীড়া নিয়ে মজা করছিলাম। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রাজীব আহমেদ রাসেল রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি রিকশা থেকে নেমে আমাদের পরিচয় জানতে চান। এ সময় আমরা নিজেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিলে তিনি হল নিয়ে কটূক্তি করেন এবং আমাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন।
তারপর তিনি তাঁর অনুসারীদের ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন এবং তিনি নিজে অস্ত্র দিয়ে পুনরায় আমাদের মারধর করেন।’
এদিকে ওই ছাত্ররা উত্ত্যক্ত করেছেন দাবি করে তাদের দ্রুত বিচারের দাবিতে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রাজীব আহমেদ রাসেলের বান্ধবী (৪৪তম ব্যাচ)। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন তিনি। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন বিপ্লব (বাংলা বিভাগ), জামি (নৃবিজ্ঞান বিভাগ), অনিক (ইতিহাস বিভাগ), বাঁধন (নৃবিজ্ঞান বিভাগ) ও পলাশ (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ)।
অভিযোগে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ওই ছাত্রী বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে একটি ছেলে তাঁকে উদ্দেশ করে অত্যন্ত বাজে মন্তব্য করে এবং একটু পরই আবার খুব জোরে একটি বাজে শব্দ উচ্চারণ করে। এসব ‘ইভ টিজারের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ক্যাম্পাসে মেয়েদের নিরাপদভাবে চলার পথ নিশ্চিত করার দাবি জানান এ শিক্ষার্থী।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সকাল থেকে অফিসের বাইরে আছি। আমার হাতে কোনো চিঠি এসে পৌঁছায়নি। তবে প্রক্টর অফিসে জমা দিয়েছে সম্ভবত।’
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা রাজীব আহমেদ রাসেল বলেন, ‘ওরা যে অপরাধী, ইভ টিজার এতে কোনো সন্দেহ নাই। কেননা ঘটনার পর পরই একজন সহকারী প্রক্টরের সামনে তা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে তারা। অন্যায়ের প্রতিবাদ আগেও করেছি আমি, সামনের দিনগুলোতেও করব। এ ক্ষেত্রে শুধু অভিযোগই নয়, আরো কিছু এলেও পিছু হটব না আমি।’