রাত পোহালেই ৭০৮ ইউপিতে ভোট
পঞ্চম ধাপের ৭০৮ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ শুরু হবে আজ বুধবার সকাল ৮টায়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
পঞ্চম ধাপের ভোটের নির্বাচনী এলাকাগুলোয় উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও সহিংসতার শঙ্কায় ২৬ জেলার ৪৪ উপজেলায় অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ৪৮ জেলার ৯৬ উপজেলার প্রতিটিতেই রয়েছে, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। কোথাও কোথাও কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও রয়েছেন।
ভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে সব নির্বাচনী এলাকায়। অনেক স্থানের সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা কঠোর অবস্থানে থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে।
ইসির দাবি, নির্বাচনে উত্তেজনা-অজানা শঙ্কার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে তারা। এর আগে চার ধাপে সহিংসতার ঘটনায় অস্বস্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এসব নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের অভিযোগের কমতি নেই।
নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবারই সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি এলাকায় টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ইসি এবারের ভোটে কঠোর অবস্থানে। ভোট নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ সহ্য করা হবে না। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে মাঠ প্রশাসন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে। এ ছাড়া কোথাও ভোট বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি হলে আমরা তা-ই করব। সব ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এ ধাপে ৪০ ইউপিতে ইভিএমে ভোট হবে। তবে এ ধাপে ভোটের আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৯৩ জন জনপ্রতিনিধি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৪৮ জন, সংরক্ষিত সদস্য ৩৩ জন এবং সাধারণ সদস্য ১১২ জন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৫৭ জন। চেয়ারম্যান তিন হাজার ২৭৪ জন, সংরক্ষিত সদস্য সাত হাজার ৯৫০ জন এবং সাধারণ সদস্য ৩৯ হাজার ৩৯১ জন। এ ধাপে মোট ভোটার সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ১৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৩১ জন ও পুরুষ ভোটার ৭০ লাখ ৬০ হাজার ১৪০ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ২১ জন। ভোটকেন্দ্র সাত হাজার ১৩৭টি এবং ভোটকক্ষ ৩৯ হাজার ৩৯১টি।
এ পর্যন্ত তিন হাজার ৭৪৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক হাজার ৫৫৫ জন জনপ্রতিনিধি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ১৪১, দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯, চতুর্থ ধাপে ২৯৫ ও পঞ্চম ধাপে ১৯৩ জন। সব মিলিয়ে ইউপি ভোট নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে ইসি।
ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম ধাপের প্রতি উপজেলায় র্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম মোতায়েন রয়েছে। বিজিবির মোবাইল টিম রয়েছে দুই প্লাটুন ও এক প্লাটুন সদস্য নিয়োজিত আছে স্ট্রাইকিং টিম হিসেবে। একই হারে কোস্ট গার্ডও মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া শঙ্কার কথা মাথায় রেখে ৪৪টি উপজেলায় অতিরিক্ত এক প্লাটুন বিজিবি এবং কোথাও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। কেন্দ্র পাহারায় পুলিশ, আনসারের সমন্বয়ে নিয়োজিত রয়েছে ২২ জনের ফোর্স। এ ছাড়া ভোটের এলাকায় পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের একটি করে টিম মোবাইল ফোর্স হিসেবে এবং প্রতি ইউপির জন্য একটি করে টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নির্ধারিত সময় পার করে গত বছরের ২১ জুন প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়। কিছু কিছু স্থানে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সেসব জায়গায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফের অবস্থার উন্নতি হওয়ায় প্রথম ধাপের বাকিগুলো ২০ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর, তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থধাপের ভোটগ্রহণ হয়। আজ পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। এ ছাড়া ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। আর সপ্তম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি।