কুমিল্লায় এক আসনেই মনোনয়ন-দৌড়ে ২৯ আ.লীগনেতা, আছেন বাবা-ছেলেও
কুমিল্লায় নির্বাচনি আসন ১১টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে লড়তে চান অন্তত ৮৬ জন। তাদের মধ্যে একই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বাবা-ছেলেও। বিভিন্ন আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ প্রবীণ ও নবীন রাজনৈতিক নেতা। নৌকার মনোনয়ন পেতে একটি আসনেই দলীয় ফরম কিনেছেন ২৯ জন। যদিও প্রচার-প্রচারণায় তরুণরাই আছেন এগিয়ে। সড়ক, হাট-বাজার মাতিয়ে রেখেছেন তারা। এরইমধ্যে দেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। তবে, নাম জানা যাবে আগামী শনিবার (২৫ নভেম্বর)।
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন পাঁচজন। তারা হলেন—সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান জয়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ব্যারিস্টার নাঈম হাসান।
কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) থেকে মনোনয়ন পেতে চান চারজন। তারা হলেন—বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরী, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মজিদ, হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আলী আহমেদ, মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল আলম।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে লড়তে নৌকার মনোনয়নপত্র কিনেছেন চারজন। তারা হলেন— বর্তমান সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, আওয়ামী লীগনেতা শফিকুল ইসলাম কাজল।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাতজন। তারা হলেন—বর্তমান সংসদ সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের নিউইয়র্ক সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার, মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুরাইয়া আক্তার, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ আবদুল আউয়াল, সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোস্তফার ছেলে ড. ইফতেখার মোস্তফা।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২৪ জন। গুঞ্জনে আছে আরও পাঁচজনের নাম। যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সে হিসেবে এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ২৯ জনের অধিকাংশই নতুন মুখ।
জানা গেছে, এই আসন থেকে মনোনয়পত্র কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী মরহুম অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, বুড়িচং সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবু ছালেক (সেলিম রেজা সৌরভ), ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল বারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগনেতা এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ জাহের, সাবেক ছাত্রলীগের নেতা আনিসুর রহমান (মিঠু), কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগনেতা আব্দুস সালাম বেগ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া, স্থপতি মো. আল আমিন, মো. ওমর ফারুক, এম এ মতিন, মো. মোকবুল হোসেন ভূঁইয়া, বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আলখাক হায়দার, মো. আব্দুল জলিল, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর সহধর্মিনী সেলিমা সোবহান খসরু, ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. শাহ জালাল মোল্লা, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাহান আরা বেগম, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক।
কুমিল্লা-৬ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন ১০ জন। তারা হলেন—বর্তমান সংসদ সদস্য মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, আঞ্জুম সুলতানা সীমা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি মিজানুর রহমান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আলী আকবর, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের সাবেক ভিপি নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম শিকদার, যুবলীগনেতা মাহবুবুর রহমান রুবেল, মহানগর আওয়ামী লীগনেতা কামাল চৌধুরী, মো. শাহাদাত হোসেন (তপন)।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ছয়জন। তারা হলেন—প্রাণ গোপাল দত্ত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিন আশরাফ টিটু, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ উল্যাহ, উপজেলা কৃষক লীগের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শাহজালাল মিঞা শিপন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজনীন আক্তার, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সদস্য জাকির হোসেন আজাদ।
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন পাঁচজন। তারা হলেন—দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ জেড এম শফিউদ্দিন শামীম, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল আবু তাহের, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বরুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসন থেকে চারজন দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তারা হলেন—কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপকমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ নূর নবী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফারুক।
কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই, নাঙ্গলকোট) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন পাঁচজন। তারা হলেন—অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আবু সোহেল, রোশন আবেদীন স্নিগ্ধা।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন আটজন। তারা হলেন—সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া হাসান, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়শা জামান, সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান, ব্যবসায়ী তমিজুদ্দিন সেলিম, আওয়ামী লীগনেতা বজলুর রশিদ ভুলু, কেন্দ্রিয় যুবলীগের সদস্য জসিম উদ্দিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার রেজা।
বাবা মনোনয়নপ্রত্যাশী জেনেও ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পারিবারিক সিদ্ধান্ত মেনেই আমি ও আমার বাবা বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অব সুবিদ আলী ভুঁইয়া, আমরা দুজনেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন, আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারুণ্যের অগ্রাধিকার পাবে, তাহলে আমাকে নেবেন আর যদি অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেন, তাহলে বর্তমান সংসদ সদস্য আমার বাবাকে নমিনেশন দেবেন।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা-১১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নমিনেশন দেবেন বলে আমি আশাবাদী।
কুমিল্লায় এত মনোনয়নপ্রত্যাশীর বিষয়টি কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতাকর্মী বেশি। সবাই স্ব-স্ব জায়গা থেকে রাজনীতির চর্চা করেন। তাই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এখন আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তিনিই হবেন আমাদের দলীয় প্রার্থী।’