জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত রহমান এখন বৃদ্ধাশ্রমে
“জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত রহমান এখন ‘গৃহবন্দি’” শিরোনামের একটি খবর এনটিভি অনলাইনে প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর। তখন বেশ আলোচিত হয় খবরটি। অন্যান্য গণমাধ্যমেও এ খবর প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ নজরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবদুর রহমানকে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেন।
২০১৬ সালে মেকআপম্যান আবদুর রহমানের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, এরপর থেকে কাজ করার ক্ষমতা হারান তিনি। অসুস্থ চিরকুমার আবদুর রহমানকে আশ্রয় দেন প্রয়াত পরিচালক তারেক মাসুদের সহকারী আলী আহসান। ‘চোখে তেমন একটা দেখতে পান না, এনটিভি অনলাইনে এ খবর পড়ে চিত্রনায়িকা তমা মির্জা তাঁর চোখের চিকিৎসা করান। এরপর চোখের আলো ফেরে আবদুর রহমানের।
দীর্ঘদিন আবদুর রহমানকে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছেন আলী আহসান। সারা বছরই অসুস্থ থাকেন আবদুর রহমান। তাঁকে দেখার মানুষ খুব একটা নেই। নিজেও নানা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন আলী আহসান। নিজের কাজে প্রায় ঢাকার বাইরে থাকতে হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁকে সাভারের ‘মিল্টন হোম কেয়ার’ নামের একটি বেসরকারি বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এসেছেন আলী আহসান।
এনটিভি অনলাইনকে আলী আহসান বলেন, ‘আবদুর রহমান ভাই আমার আত্মীয় নন, তবে তারও বেশি কিছু। আমি প্রয়াত পরিচালক তারেক মাসুদ স্যারের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। রহমান ভাই একজন মেকআপম্যান, আমরা একই জগতের মানুষ। সে হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে আমার বাসায় তিনি থেকেছেন, খেয়েছেন। বর্তমানে তিনি অনেক বেশি অসুস্থ। বিছানায় পড়ে থাকেন। আমি কাজে বের হতে পারি না উনার জন্য। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এসেছি কয়েক মাস আগে। যদিও খারাপ লেগেছে খুব। তবে সেখানেই ভালো থাকবেন তিনি। কারণ তিনি কোনো অনাথ বৃদ্ধাশ্রমে নয়, মাসে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে সম্মানের সঙ্গে থাকছেন।’
আলী আহসান আরো বলেন, ‘আবদুর রহমান যে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছিলেন, তার থেকে চিকিৎসা বাবদ দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়। বাকি টাকা এখনো ব্যাংকে আছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে বৃদ্ধাশ্রমে দিচ্ছি। আগামী দু-আড়াই বছর চালাতে পারব। তারপর সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এনটিভি অনলাইনকে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ঋণী। সবাই আমার জন্য অনেক করেছেন। আলী আহসান আমাকে বাবার মতো সম্মান ও ভালোবাসা দিয়েছে। চলচ্চিত্রের মেকআপম্যানরা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। এখন এই বৃদ্ধাশ্রমে ভালো আছি। সবাই আমার খোঁজখবর রাখছেন।’
পরিবারে আর কে আছেন, জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমার কোনো পরিবার নেই। কাজই আমার পরিবার ছিল। আমি বিয়ে করিনি। আমার বাড়ি বিক্রমপুর। বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। বাড়িতে যাই না পঁচিশ বছর। সেখানে আমার কিছু নেই। সারা জীবন কাজ করে গেছি, টাকা সঞ্চয় করার চিন্তা করিনি। সব সময় মনে হতো একা মানুষ, কাজ করে জীবনটা পার করে দেব। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা আমাকে অসহায় করে দিয়েছে।’
আবদুর রহমান প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন ১৯৬৫ সালে। ২০১০ সালে ‘মনের মানুষ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৪ সালে মাসুদ পথিক পরিচালিত সরকারি অনুদানের ছবি ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’-এর জন্য দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। সর্বশেষ ‘ভুবন মাঝি’ ছবিতে মেকআপম্যানের কাজ করেছেন আবদুর রহমান।