মোস্তফা কামাল সৈয়দবিহীন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির এক বছর
গণমাধ্যম, বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষকে কাঁদিয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান, বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর মোস্তফা কামাল সৈয়দ গত বছরের ৩১ মে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোক নামে এনটিভি পরিবারে। সেই শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি কেউ। আজ এই বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
২০২০ সালের ১১ মে মোস্তফা কামাল সৈয়দ অসুস্থ হলে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ৩১ মে দুপুরে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্বনামধন্য টিভি প্রযোজক, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, আবৃত্তিকার ও পরিচালক হিসেবেও পরিচিতি ছিল মোস্তফা কামাল সৈয়দের। ছিল ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা।
বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি টেলিভিশন জগতে অনন্য অবদান রাখা মোস্তফা কামাল সৈয়দ একেবারে আলাদা জীবন যাপন করতেন। তিনি কখনও মুঠোফোন ব্যবহার করেননি। নাটক ও অনুষ্ঠান নির্বাচনেও সরাসরি প্রান্তিক পর্যায়ে কথা বলে নিতেন। আর তাই তাঁর মৃত্যুর পর বহু মানুষের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষের নানান স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন তিনি।
পর্দার পেছনের মানুষ হলেও মিডিয়া জগতে সজ্জন ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ বাংলাদেশের দর্শকের কাছে খুব চেনা। আশি দশকের শুরুতে বিটিভির নাটকের শুরুতে সূচনা সংগীতের পাশাপাশি ভূমিকা কিংবা পুরো নাটকের সারমর্ম সূচনাপর্বে নেপথ্য কণ্ঠে ভেসে আসত। অনেক সময় নাটকের শেষে নেপথ্যে থেকে কিছু না বলা কথা প্রচার হতো। সে সময়ের বেশির ভাগ নাটকের ভূমিকায় কিংবা উপসংহারে শোনা যেত মোস্তফা কামাল সৈয়দের কণ্ঠ।
মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনায় বেশ কিছু নাটক দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সত্তর দশকের শেষের দিকে তাঁর প্রযোজনায় মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘প্রজাপতি মন’, আশি দশকের শুরুতে আন্তন চেখবের গল্প অবলম্বনে মমতাজউদদীন আহমদের লেখা ‘স্বপ্ন বিলাস’ ছাড়াও ‘নিলয় না জানি’, ‘বন্ধু আমার’, ‘নীরবে নিঃশব্দে’, কাজী আব্দুল ওয়াদুদের লেখা ‘নদীবক্ষে’ উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘কুল নাই কিনার নাই’ ইত্যাদি সফল নাটকের সফল প্রযোজক ছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ।
১৯৪৩ সালে মোস্তফা কামাল সৈয়দ ঢাকার তেজকুনিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সৈয়দ জিল্লুর রহমান এবং মা আমাতুল উমদা বেগম। বাবা তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্নের পর প্রযোজক হিসেবে পাকিস্তান টেলিভিশন করপোরেশনে যোগ দেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। সুদীর্ঘ টেলিভিশন-যাত্রায় বিভিন্ন সময় সৃষ্টি করেন অনেক কালোত্তীর্ণ অনুষ্ঠান, নাটক। অর্জন করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক পুরস্কার।
মোস্তফা কামাল সৈয়দ কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন টিভি চ্যানেলে। পৌরুষদীপ্ত জাদুকরি কণ্ঠের অধিকারী মোস্তফা কামাল সৈয়দ নিয়মিত বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাটক ও বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দিতেন। সুদীর্ঘ সরকারি চাকরিজীবন শেষে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের উপমহাপরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ২০০৩ সালে এনটিভির শুরু থেকে তিনি অনুষ্ঠান বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ৫২ বছরের কর্মজীবনে তিনি পাকিস্তান টিভিতেও শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করেছেন।