৩৫ বছর অভিনয়ের পরও ‘একটি ভালো চরিত্রের’ জন্য আক্ষেপ
‘আরণ্যক নাট্যদল’-এ অভিনয় শুরু করেন ছোট পর্দার অভিনেতা কাজী উজ্জ্বল। সেই সালটা যে ১৯৮৫, সেটা মনে করতে মোটেও সময় লাগল না। তবে হিসাব করতে সময় লাগল অভিনয়ে তাঁর ক্যারিয়ার দীর্ঘ ৩৫ বছরের।
সময় লাগার কারণটাও জানালেন, দীর্ঘ এই সময়টাকে নিজের ক্যারিয়ার বলতে নারাজ একসময়ের সরকারি কর্মকর্তা কাজী উজ্জ্বল। রাজধানীর পাঁচ তারকা একটি হোটেলে এক আয়োজনের ফাঁকে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আড্ডায় কাজী উজ্জ্বল বলছিলেন, ‘এটাকে ঠিক ক্যারিয়ার বলব না, স্ট্রাগল করে যাচ্ছি এখনো। এটা কিন্তু ক্যারিয়ার না। হ্যাঁ, একজন শিল্পী হিসেবে বা অভিনেতা হিসেবে একটা জায়গায় আসতে পেরেছি।’
বর্তমানে বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করছেন কাজী উজ্জ্বল। সেই তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে; আর নাটকে বেশ পরিচিত মুখ মানুষ হাসানোর জন্য। তবুও আক্ষেপ এই অভিনেতার কণ্ঠে, ‘আমি মঞ্চটাকে খুব মিস করছি; যেটি আমার আত্মার জায়গা। কিন্তু রুটি-রুজির তাগিদে এখন মুভি করতে হচ্ছে, টেলিভিশন করতে হচ্ছে, বিজ্ঞাপন করতে হচ্ছে।’
নাটকে মানুষ হাসানো উজ্জ্বলের পছন্দ বা প্যাশনের জায়গা খল চরিত্র। লম্বা আড্ডায় বলেই ফেললেন, ‘পাশের দেশের খল অভিনেতাদের অভিনয় দেখে এখনো বাসায় আয়নার সামনে সেটা করে দেখার চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই চরিত্রে নিজে অভিনয় করতে পারলে ওই অভিনেতার চেয়ে কম কিছু করতাম না।’
সে জন্য আক্ষেপও আছে বেশ। অভিনয়ে এত সময় পার করা মানুষটা নিজের মনে রাখার মতো কাজ প্রসঙ্গে বললেন, ‘মনে দাগ কাটার মতো কাজ আমি এখনো পাইনি। খল চরিত্রটা আমার খুব পছন্দের, কিন্তু ওই লেভেলের খল চরিত্রে এখনো কাজ করার সুযোগ পাইনি।’ তবে অমিতাভ রেজার বাংলালিংকের আলাল-দুলাল বিজ্ঞাপন নিজের অভিনয়জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন এই অভিনেতা।
আড্ডায় প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত মুখ ছিলেন। কিন্তু এখন আর দেখা যাচ্ছে না কেন? উত্তরে বেশ রহস্য রাখলেন, ‘আগে করতাম, এখন আর করি না। কারণ জানি না। তবে হানিফ সংকেত কাজী উজ্জ্বলকে নিলে কাজী উজ্জ্বল খুশি হবে।’
নাটকের সংকট প্রসঙ্গে উজ্জ্বলের ভাষ্য, ‘বাজেট খুবই কম। এত কম বাজেটের মধ্যে ৯০ ভাগ বাজেট নিয়ে যায় নায়ক-নায়িকা। সিন্ডিকেট-বহির্ভূত কিছু নায়ক-নায়িকা দরকার।’
যত দিন বেঁচে থাকবেন, অভিনয় করে যেতে চান কাজী উজ্জ্বল। এর বাইরেও একটি স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই স্বপ্নের কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি নিজের জন্য কাজ করতে চাই, ১০০টি ছেলেমেয়েকে আমি মানুষ করতে চাই। উত্তরায় আমার একটা জমি আছে, ওখানে একটা আশ্রমের মতো করতে চাই। সেখানে কেউ ইচ্ছে করলে খেলা করবে, কেউ ইচ্ছে করলে হারমোনিয়াম বাজাবে; মানে একজন মানুষ বানানোর জন্য বাকি জীবনটা দিয়ে দিতে চাই। ১০০ বাচ্চার সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চাই। ’
আড্ডার শেষ দিকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এখন অভিনয়-ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলে কী আক্ষেপ থাকবে আপনার? তাঁর উত্তর ছিল, ‘একটি ভালো চরিত্র...।’